ঢাকা | রবিবার
২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসা সেবায় বিদেশমুখীতাঃ উত্তরণের উপায়

দেশে প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও কেবল আস্থাহীনতার কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা নিতে বিদেশে ছুটছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সারওয়ার বারী। তিনি বলেছেন, এই আস্থার সংকট দূর করা এখন সবচেয়ে জরুরি। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরাডপ মিলনায়তনে ‘চিকিৎসা সেবায় বিদেশমুখীতা: আমাদের উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা কমাতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার উদ্যোগী হয়েছে মন্তব্য করে সচিব সারওয়ার বলেন, রোগীদের এই বিদেশ মুখাপেক্ষিতা রোধে অন্তর্বর্তী সরকার ক্যানসারসহ অন্তত তিনটি রোগের অত্যাধুনিক চিকিৎসায় কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদের প্রস্তুত করছে।

এছাড়াও এ খাতকে আরও ত্বরান্বিত করতে সরকার কর অব্যাহতির জন্য ইতোমধ্যে রাজস্ব বোর্ডের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। আর বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংস্কারের কাজ ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে সরকার।

স্বাস্থ্যখাতের মানোন্নয়নে মেডিকেল অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলকে শক্তিশালী করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিপিএমসিএ সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো এবং মান উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। জটিল রোগ নির্ণয় করার ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদির যোগান নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও চিকিৎসা খাতে গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং চিকিৎসকদের জন্য চলমান শিক্ষা প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানেরা পাশাপাশি চিকিৎসা পদ্ধতি সংস্কারের প্রয়োজন। দেশের প্রধান শহরগুলিতে বিশ্বমানের বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করার দরকার।

প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে উচ্চমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

চিকিৎসা পর্যটনকে উৎসাহিত করার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের অধ্যাপক ডা. মো. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সাশ্রয়ী সেবার সঙ্গে চিকিৎসা পর্যটন খাতকেও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য সরকারকে কর ছাড়সহ আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এছাড়াও একটি জাতীয় বীমা স্কিম তৈরি করতে হবে যাতে জটিল সার্জারি ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসহ সকল চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হয়। এতে মানুষ বিদেশে যাওয়ার চেয়ে দেশে চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠবে। অপরদিকে বিদেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণকে কম আকর্ষণীয় করতে কিছু নীতি বাস্তবায়ন করারও তাগিদ দেন তিনি।

বিপিএমসিএ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, চিকিৎসা সেবায় কিছুটা উন্নতি হলেও অব্যবস্থাপনা ও মানসম্পন্ন চিকিৎসার ঘাটতি রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের বাইরে পর্যটক ভিসায় গিয়ে চিকিৎসা ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশে চিকিৎসা বাবদ প্রকৃত ব্যয় আরও কয়েক গুণ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি। পাশাপাশি বিশ্বের নামকরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে এই বিপুল অর্থ দেশে রাখা সম্ভব।

অধ্যাপক ডা. মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার বলেন পেশাজীবীদের মধ্যে ব্যবসায়ীরাই বেশি দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান। এসব ব্যবসায়ীর মধ্যে থাইল্যান্ড ও ভারতে যাওয়ার সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। এরপর রয়েছে সিঙ্গাপুরের অবস্থান।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ১২ রোগের চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে যাচ্ছে মানুষ। কারণ চিহ্নিত হয়েছে আটটি। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদরোগের চিকিৎসা, যা মোট রোগীর ১৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম যাচ্ছে চোখ ও দাঁতের চিকিৎসা করাতে, যা মোট রোগীর ২ শতাংশ করে।

এছাড়া ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী কিডনি রোগের, ১১ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী অর্থোপেডিক সার্জারির জন্য, ১১ শতাংশ করে রোগী লিভার ও ক্যানসার রোগের, ৯ শতাংশ রোগী নিউরোলজি, ৬ শতাংশ রোগী গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও ইউরোলজি, ৫ শতাংশ রোগী নাক-কান-গলা এবং ৪ শতাংশ করে রোগী জেনারেল সার্জারি ও গাইনোকলজির চিকিৎসায় বিদেশে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যাণ্ডসহ ১৯টিরও বেশি দেশে প্রতি বছর চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন ৮ লাখেরও বেশি মানুষ, যার অধিকাংশের গন্তব্যই ভারতে।

সংবাদটি শেয়ার করুন