বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপজেলা পর্যায়ে বৈষম্যের শিকার সদস্যরা ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন। তারা জানান, বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবেলা, দুর্যোগকালীন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও পুনর্বাসন করা এবং নির্বাচন পরিচালনায় এই বাহিনীর তৃণমূল পর্যায়ের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে। এই তৃণমূল পর্যায়ের সকল কাজ মূলত একজন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।
মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা জানান, এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করলেও উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তারা নানা রকম বৈষম্য, ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে কর্মজীবন পার করছেন। এই পরিস্থিতিতে তারা ৯ দফা দাবি তুলে ধরেছেন।
তারা মনে করছেন নতুন সরকার তাদের বঞ্চিত করবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধাপে ধাপে উপজেলার অন্যান্য প্রায় সকল দপ্তর প্রধান দশম গ্রেড (দ্বিতীয় শ্রেণি) থেকে নবম গ্রেডে (১ম শ্রেণি) উন্নীত হলেও দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাদের। এর ফলে প্রচণ্ড মনঃকষ্ট ও হীনমন্যতা নিয়েও কর্মজীবনে নিবেদিত প্রাণ হয়ে দায়িত্ব পালন করছে এই কর্মকর্তারা। তাই অন্তর্র্বতীকালীন সরকার, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও মহাপরিচালকের কাছে বাহিনী সদস্যরা তাদের দুর্দশা লাঘবে ৯ দফা দাবি পেশ করেন।
এগুলো হলো-
১.সার্কেল অ্যাডজুটান্ট/উপজেলা আনসার ও ভিডিপি অফিসার/সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট পদটিকে ৯ম গ্রেডে আপগ্রেডেশন এবং উপজেলা প্রশিক্ষক/প্রশিক্ষিকা পদটিকে ১০ তম গ্রেডে আপগ্রেডেশন করা।
২। সার্কেল অ্যাডজুটান্ট/উপজেলা আনসার ও ভিডিপি অফিসার/ সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট পদে হতে সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫০% পদে নিয়োগ দিতে হবে।
৩। যথাসময়ে পদোন্নতি না হলে এবং পদ ফাঁকা না থাকলে সুপারনিউমেরি পদ্ধতিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। অঙ্গীভূত আনসার সদস্য শূন্য পদের বিপরীতে পদায়ন, বদলী ও শাস্তির ক্ষেত্রে ইউএভিডিও এর মতামত গ্রহণ ও অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৫। ইউএভিডিও ও টিআইদের সাথে মহাপরিচালক মহোদয় এর বার্ষিক ২টা মতবিনিময় সভা (দরবার) করতে হবে।
৬। উপজেলায় ইউএভিডিও এবং টিআইদের এর জন্য ঝুঁকি ভাতা চালু করতে হবে।
৭। ইউনিয়ন/ওয়ার্ড দলনেতা/দলনেত্রী/আনসার কমান্ডারদের এক(১) ইউনিট রেশন দিতে হবে।
৮। আনসার আইন সংশোধন করে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে স্বতন্ত্রভাবে একটি নির্দিষ্ট কাজ এর দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। যেমন- (তদন্ত ক্ষমতা, বন্দরগুলোর নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষার নিরাপত্তা, উপজেলা প্রশাসনের সাথে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, দুর্নীতি দমন কমিশনে আনসার ব্যাটালিয়নকে সম্পৃক্ত করা)।
৯। রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সাধারণ আনসার নিয়োগ দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, পূর্বে কয়েকজন মহাপরিচালক নবম গ্রেডে উন্নীতকরণের বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নিলেও বিসিএস আনসার ক্যাডারদের অনিচ্ছা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘ ১২ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা পর্যায়ের বেশ কিছু দপ্তর প্রধান পদ ১০ম থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত হয়েছে। প্রতি বছর আনসার ও ভিডিপি জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত দরবারে ক্যাডার কর্মকর্তাদের আপত্তি অতিক্রম করে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তারা তাদের দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু ‘‘সমাবেশ শেষে সান্ত্বনা প্রদান ও কালক্ষেপণ করার জন্য দাবিটি বাস্তবায়নে বাহিনী থেকে লোক দেখানো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। যা খুব পীড়াদায়ক। ”
একজন কর্মকর্তা বলেন, অথচ ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দাবি ও ইচ্ছা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তা যথাসম্ভব পূরণ করা হয়। যত দিন যাচ্ছে উপজেলা কর্মকর্তাদের প্রতি বৈষম্য ও অবহেলার পরিমাণও বাড়ছে। অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য উপজেলা কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক পোশাক (সিরিমোনিয়াল ড্রেস) পরিধানের দাবি থাকলেও তা পূরণ হয়নি অথবা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ও কারা অধিদপ্তরের ১১তম গ্রেডের কর্মকর্তারাও আনুষ্ঠানিক পোশাক (সিরিমোনিয়াল ড্রেস) পরিধানের প্রাধিকারভুক্ত।
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সমাবেশে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাদের আসন গ্রহণের জন্য নির্ধারিত কোন স্থান না থাকায় বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করে অবশেষে তারা বসার স্থান না পেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনঃকষ্ট নিয়ে প্যারেড উপভোগ করে। শুধু আগত সকল অতিথি এবং বাহিনীর মহাপরিচালকের সম্মানের দিকে তাকিয়ে তারা সমাবেশস্থল থেকে বেরিয়ে যায়নি।
বাহিনীর মহাপরিচালকের সাথে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাদের সরাসরি কোন মতবিনিময় না থাকার কারণে তাদের মনঃকষ্ট মহাপরিচালককে জানাতে পারেন না। বেশ কয়েকবার মহাপরিচালকের সাথে বছরে একাধিক পৃথক মতবিনিময়ের দাবি জানালেও ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রভাবে তা সম্ভব হয়নি।