ঢাকা | সোমবার
১৪ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিজিটাল প্লাটফর্মে স্বপ্ন বুনছে তরুণরা

ডিজিটাল প্লাটফর্মে স্বপ্ন বুনছে তরুণরা

তথ্যপ্রযুক্তির আবাহনে ইউটিউব এবং ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিন দিন জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থ আয়ের একটি প্লাটফর্মে হিসেবে গড়ে উঠেছে। নানা বয়সি মানুষ তাদের মেধা আর পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে নানা প্রকার কনটেন্ট তৈরী করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন বুনছেন। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এ পেশায় অনেকেই বেশ সাফল্য অর্জন করছেন।

এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় এক ঝাক তরুণ ও যুবক এ পেশায় দক্ষতার সাথে কাজ করে নিজেরা সফল্যতার সাক্ষর রাখছেন। তারা ইউটিউব ও ফেসবুক পেইজ খুলে হাট বাজার, কৃষি, মৎস্য,দর্শনীয় স্থান, প্রাচীন মসজিদ, ইসলামী সঙ্গীত, বিনোদন, সাফল্য-সম্ভাবনা, দূর্ভোগসহ ব্যতিক্রম নানা বিষয়ে নিত্য নতুন কনটেন্ট তৈরী করে মানুষের প্রশংসা কুড়িয়ে যাচ্ছেন। এসবের কারণে তারা দ্রæত জনপ্রিয় পেয়ে টাকা আয় করছেন। ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরীতে দিন দিন তরুণ ও যুবকরা এ পেশায় বেশী ঝুকছেন। তাদের সুন্দর সাবলিল আর হৃদয় রাঙ্গানো ভাষায় উপস্থাপনা আর নানা বিষয়ের অজানা তথ্য নিয়ে ব্যতিক্রম কনটেন্ট তৈরী করায় সর্ব মহলের প্রশংসা পাচ্ছেন।

একাধিক তরুণ জানায়, ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের মূল উৎস হচ্ছে ভিউস। যে ভিডিও যত বেশি ভিউস হবে সেটি তত বেশি অর্থ উপার্জন করবে। মোটামুটিভাবে প্রতি হাজার মনেটাইজ ভিউতে আয় আসে। তবে ভিডিও তৈরির সেটি অবশ্যই মজাদার বা শিক্ষণীয় ও ভালো মানের হতে হয়। নতুন নতুন কনটেন্ট তৈরী করতে তারা নিজ এলাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গাতে যাচ্ছেন। এ যেন এক নীরব প্রতিযোগিতা চলছে।

উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মো: ইব্রাহিম ভূঁইয়া লিটন বলেন, স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করার পর নিজ এলাকায় ব্যবসা শুরু করি। মাঝে মধ্যে ফেসবুক দেখা হতো। ফেসবুকে সমসাময়িক নানা বিষয়ে দেখে আমার খুবই ভালো লাগতো। নিজের অজান্তেই এক প্রকার শখ তৈরী হয়। সেই শখ থেকে ফেসবুকে মাছ চাষ, সবজি আবাদ, ধান চাষ, হাঁস-মুরগি পালনসহ মানুষের সাফল্য নিয়ে ছোট আকৃতির ভিডিও করে ফেসবুবে পোষ্ট দেওয়া হতো। তখন আমার কাছে দামি কোনো ভালো মোবাইল, অন্যান্য যন্ত্রপাতি আর ইন্টারনেট সুবিধা তেমন ভালো ছিল না। নিজস্ব চিন্তা ধারায় যতটুকু সম্ভব নানা বিষয়াদিগুলো ভিডিওর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করি। এসময় নিজের বন্ধু বান্ধব, আর স্বজনরা অনেকেই সাহস যোগিয়েছে। তবে আবার অনেকে এটাবে ভালো চোখেও দেখেনি। কিন্তু আমি আমার লক্ষ্য থেকে তিল পরিমাণ ও সরেনি। এ যেন মনে হয় এক প্রকার ঢাল-তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধে নামার মতো অবস্থা। সাফল্য-সম্ভাবনাসহ ব্যতিক্রম নিত্য নতুন ভিডিওগুলো ফেসবুক ব্যবহারকারীরা লাইক কমেন্ট আর ভিউ দিয়ে আমার কাজের গতি বাড়িয়ে দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে কৃষকের কথা নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেইজ খুলে নিয়মিত হাট বাজার, কৃষি, মৎস্য,দর্শনীয় স্থান, প্রাচীন মসজিদ, বিনোদন, সাফল্য-সম্ভাবনাসহ ব্যতিক্রম নানা বিষয়ে নিত্য নতুন কনটেন্ট তৈরী করা ভিডিও আপলোড করছি। একটানা প্রায় ৩ বছর পর মনিটাইজেশন পেয়ে ইনকাম পাচ্ছি।
লিটন আরও বলেন, আসলে ফেসবুক আর ইউটিউব হচ্ছে নীরব টাকা আয় করার একটি বড় ফ্লাটফর্ম। আমার ইউটিউব চ্যানেলটি কৃষকের কথা নাম দেওয়ার কারণ হলো আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষিতে কিভাবে সাফল্য আনা যায় সেইলক্ষে গঠনমূলক বিষয় ভিত্তিক নানা প্রকারের তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিকের উপর সাফল্য-সম্ভাবনাসহ ব্যতিক্রম নানা বিষয়ে নিত্য নতুন কনটেন্ট তৈরী করা ভিডিও ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে আপলোড করা হয়। একটি ভিডিও সর্বোচ্চ ৪ লাখ ভিউ হয়েছে বলে তিনি জানান।

ওই ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের মো: পারভেজ বলেন, এসএসসি পরীক্ষা পাশের পর পরিবারের কথা চিন্তা করে চাকুরি নেওয়া হয়। ২০২০ সালে ফেইসবুকে একটি পেইজ খোলা হয়। তখন নিয়মিত ফেসবুক এবং ইউটিউবে সাফল্য-সম্ভাবনা আর দর্শনীয় স্থানসহ নানা বৈচিত্রময় ভিডিও দেখা হতো। দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই এক প্রকার শখ তৈরী হয়। ২০২৩ সালে বন্ধু বান্ধবদের উৎসাহে সাহস করে কৃষি, মৎস্য, খামার,দর্শনীয় স্থানসহ নানা প্রকারের বৈচিত্রময় ভিডিও তৈরী করে ফেসবুক পেইজে দেওয়া শুরু করি। প্রথম দিকে তেমন সারা পাওয়া যায় নি। এরপর ও আমি হাল ছাড়েনি। সে আরও বলেন বেশ কিছু দিন আগে আমার খালাতো ভাই এর মোটর সাইকেলের সাথে একটি অটো রিকশায় সংঘর্ষ হলে মোটরসাইকেলটি বেশ ক্ষতি হয়। এটি নিজের ভাষায় কথা বলে ভিডিও করে পেইজে দেওয়া হয়। মুহুর্তে মধ্যে এটি বেশ সারা পড়ে। দুই দিনে প্রায় ২লাখ ৪০ হাজারের উপর ভিউ হয়। এটার মধ্যে দিয়ে আমি মনিটাইজেশন পেয়ে ইনকাম পাচ্ছি। এতে উৎসাহ বেড়ে যাওয়ায় ধারা বাহিকভাবে কৃষি, মৎস্য, খামার,দর্শনীয় স্থানসহ নানা প্রকারের বৈচিত্রময় বিষয়ে কনটেন্ট তৈরী করে ভিডিও আপ-লোড করা হয়। এসব কাজ করতে ভালো মোবাইল, ক্যামেরা, মোবাইল স্ট্যান্ডসহ নানা প্রকারের জিনিস ক্রয় করা হয়।

ইউটিউবার মো: কাইয়ুম নামে বলেন, আসলে ইউটিউব এবং ফেসবুক এসব সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা ছিল না। মোবাইল দেখে আমার আগ্রহ তৈরী হয়। এরপর ব্যবসার পাশাপাশি শুরু বøগিং করা শুরু করি। প্রথমে নিজের লোকজন ভালো চোখে দেখেনি। নিজ যোগ্যতা আর মেধা দিয়ে সমসাময়ীক নানা জাতের ভিডিও ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে আপলোড করছি। আমার ফেসবুক পেইজে ফলোয়ার ৭ হাজারের উপর। ব্লগ দেখে সবাই যখন লাইক কমেন্ট আর ভিউ দেয় তখন খুব ভালো লাগে। প্রতি মাসে ভালো টাকা আয় হয়।

আখাউড়া উপজেলা সচেতন নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মুসলেহ উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, বর্তমান এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে সব কিছুই এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে তরুণ যুবকরা ইউটিউব ও ফেসবুকে নানা প্রকারের প্রতিবেদন তৈরী করে অজানা তথ্য তুলে ধরছেন। আসলে এই প্রযুক্তিকে সঠিক ব্যবহার করে অনেকেই ভালো টাকা উপার্জন করছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন