গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের নীতির প্রতিবাদে আট শো’র বেশি কর্মকর্তা একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থনে তাদের নিজ নিজ দেশের সরকারের নীতি ‘আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন’ হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) এ খবর জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের নীতিকে সমর্থন জানিয়ে তাদের প্রশাসন ‘এই শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে একটির সঙ্গে জড়িত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু এখানে তাদের বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টাদের পরামর্শকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
এতে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের ১১টি দেশের বেসামরিক কর্মকর্তারা স্বাক্ষর করেছেন।
তবে, যারা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বা সমর্থন করেছেন তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। বিবিসি তাদের নামের তালিকা দেখেনি। তবে এতে এমন প্রায় অর্ধেক কর্মকর্তাদের সাক্ষর রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের অন্তত এক দশকের সরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিবৃতিটিকে ইসরায়েলের প্রধান কয়েকটি পশ্চিমা মিত্র সরকারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রার ভিন্নমতের সর্বশেষ ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত এক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেছেন, এখানে পার্থক্য এটাই যে, আমরা হয়ত যুদ্ধকে প্রতিরোধ করতে পারব না। কিন্তু আমরা তাদের (গাজার নিরীহ মানুষ) সঙ্গে আছি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় যে সামরিক হামলা চালাচ্ছে তার কোনও সীমারেখা নেই। এর ফলে সেখানে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হচ্ছে। অথচ এই মৃত্যু প্রতিরোধ করা যেত।
এছাড়া গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে সহযোগিতা বন্ধ করার বিষয়টিও সেখানকার বেসামরিক মানুষদের অনাহার ও ধীরে ধীরে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলছে। এতে আরও বলা হয়েছে, আমাদের সরকারের নীতিমালা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ, এমনকি জাতিগত নির্মূল বা গণহত্যায় অবদান রাখার মতো জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বিবৃতিটিকে একাধিক সরকারে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বেসামরিক কর্মচারীদের অভূতপূর্ব সমন্বয়, অবসরপ্রাপ্ত এক মার্কিন রাষ্ট্রদূত তা উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের বিবৃতির তেমন কোনও প্রভাব হয়ত নেই। কিন্তু তারপরও অ্যভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার জন্য দায়ী কয়েকজন ইহুদি সেটেলারদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওইদিনই গাজায় নির্বিচারে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, চলমান এই সংঘাতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বর্বর হামলায় অঞ্চলটিতে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা গাজার মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও বেশি। যুদ্ধ শুরুর আগে সেখানে ২৩ লাখ মানুষের বসবাস ছিল। অপর দিকে, হামাসের ওই হামলায় ইসরালের এক হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ সময় প্রায় ৩৪০ জনের বেশি জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা।