বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জন্মহার কমে যাওয়ার ফলে অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সংকট আর শঙ্কা প্রকট হচ্ছে চীনে। দেশটির সরকার বেশি বেশি সন্তান জন্মদানে নারীদের উৎসাহ ও নতুন নতুন প্রণোদনা ঘোষণা করলেও কিছুতেই চীনের জনসংখ্যায় বাড়ানো যাচ্ছেনা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস চীনের জনসংখ্যায় কমছে বলে এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (এনবিএস) বুধবার (১৭ জানুয়ারি) জনসংখ্যার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
এনবিএস’র মতে, ২০২৩ সালে চীনের জনসংখ্যা কমে ১৪০ কোটি ৯০ লাখে নেমে এসেছে—যা আগের বছরের তুলনায় ২০ লাখ ৮০ হাজার কম। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি চায়, তাদের দেশের নারীরা বেশি বেশি সন্তানের মা হোক। তাই তাঁদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে সস্তায় আবাসন, কর সুবিধা ও নগদ প্রণোদনা। সে সঙ্গে, দেশপ্রেমকেও কাজে লাগিয়ে তারা নারীদের ‘ভালো স্ত্রী ও মা’ হতে বলছে।
২০২২ সালে চীনের জনসংখ্যা কমেছিল ৮ লাখ ৫০ হাজার। ১৯৬১ সালের মাও সে-তুংয়ের শাসনামলে চীনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পর ২০২২ সালেই প্রথম জনসংখ্যা সংকুচিত হতে দেখেছিল চীন। আর জনসংখ্যা হ্রাসে ২০২৩ ছাপিয়ে গেছে ২০২২-কেও। ২০২২ সালের পর ২০২৩ সালেও চীনের জনসংখ্যা হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। নারীরা বিয়ে ও বাচ্চা জন্মদানে কম আগ্রহী হওয়ায় চীনের জনসংখ্যা টানা দ্বিতীয় বছরও কমেছে। এনবিএসের তথ্যানুযায়ী, গত বছর দেশটিতে প্রতি ১ হাজার জনের বিপরীতে শিশুর জন্মহার ৬ দশমিক ৩৯। ২০২২ সালেও এই হার ছিল ৬ দশমিক ৭৭। ১৯৪৯ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটিতে এটিই সবচেয়ে কম জন্মহারের রেকর্ড। ২০২৩ সালে চীনে ৯০ লাখ ২০ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। এর আগের বছর দেশটিতে জন্ম নেয় ৯৫ লাখ ৬০ হাজার শিশু।
সংস্থাটি আরও বলেছে, গত বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। দেশটির সরকার ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। ২০২২ সালের তুলনায় গত বছর চীনের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। যদিও গত তিন দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এখন চীনের অর্থনীতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় শ্রমশক্তি কমতে থাকা।
১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সী শ্রমশক্তি ২০২২ সালের তুলনায় গত বছর দেশটিতে ১ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার কমেছে। অন্যদিকে, ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় বেড়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার। দশকের পর দশক ধরে ‘এক সন্তান নীতি’ মেনে চলে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল চীন। কিন্তু জনসংখ্যা কমতে শুরু করায় বিবাহিত দম্পতিদের বেশি বেশি সন্তান নিতে সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহ দেওয়া হলেও বাড়ছে না জন্মহার। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়া এবং শিশুর জন্ম কম হওয়ায় ২০১৫ সালে ‘এক সন্তান নীতি’ থেকে সরে আসে চীন।