কুড়িগ্রাম ১ এবং কুড়িগ্রাম ২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার হয়েছে। জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে এ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: সাইদুল আরীফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কুড়িগ্রামের ৪ টি আসনের মধ্যে ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী নিয়ে কুড়িগ্রাম ১ আসন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আসলাম হোসেন সওদাগর। কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী ও রাজাহাট উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম ২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: জাফর আলী।
এদিকে নৌকার প্রার্থী আলহাজ্ব জাফর আলীর প্রার্থীতা প্রত্যাহার হওয়ায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কুড়িগ্রাম ২ আসনের মধ্যে জেলা সদর থাকায় বরাবরই এই আসনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বরাবরই সরকার দলীয় এমপি না থাকার কারণে কুড়িগ্রামের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি বলে মনে করেন কুড়িগ্রামের সচেতন মহল।
তবে, এবার এই আসনের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল এই ভেবে যে নৌকার প্রার্থীর বিজয়ের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করায় কপাল পুড়েছে দুই আসনের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এবং মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে খ্যাত মো: জাফর আলীর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, আমরা আসলেই দুর্ভাগা। রাজনৈতিক স্বার্থে কুড়িগ্রাম ২ আসনটি বারবার আমাদের জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ফলে আমাদের প্রাণ প্রিয় নেতা জাফর আলীকে এবারও আমরা এমপি হিসেবে দেখতে পেলাম না। জননেত্রী শেখ হাসিনা জাফর আলীকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ায় কুড়িগ্রামের সাধারণ ভোটারগণসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছিলো। কুড়িগ্রাম ২ আসনটিতে আওয়ামী লীগের এমপি থাকলে দারিদ্রপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলায় ব্যাপক পরিবর্তন আসতো বলে মনে করেন তারা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, কুড়িগ্রাম-২ আসন মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রাণ তৃণমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। হতাশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারাও। তিনি বলেন, এখন কুড়িগ্রামে জাতীয় পার্টির তেমন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। কেননা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ জাফর আলী তাঁর রাজনৈতিক চৌকসতায় কুড়িগ্রামে জাতীয় পার্টিকে ভেঙ্গে ইতোমধ্যে টুকরো টুকরো করে ফেলেছেন। ফলে এককভাবে জাতীয় পার্টির বিজয় অর্জন করার মতো সামর্থ্য আর নেই।
তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য পীড়িত কুড়িগ্রামকে এগিয়ে নিতে কুড়িগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কোন বিকল্প নাই। তারপরও জেলা সদরের এই আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় আমরা আওয়ামী লীগের তৃণমুল নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। কেননা কুড়িগ্রাম এখনো দেশের মধ্যে দারিদ্র্যের শীর্ষে অবস্থান করছে। রাজনেতিক স্বার্থে কুড়িগ্রাম জেলাকে আবারও পিছনের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো।
প্রসঙ্গত কুড়িগ্রাম ২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেওয়ার জন্য গত ২০ নভেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন মো: জাফর আলী। পরবর্তীতে ২১ নভেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের পদটি শুন্য ঘোষণা করে অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে মিনহাজুল ইসলাম আইয়ুবকে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইদুল আরীফ বলেন, আজ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক লিখিত পত্রে কুড়িগ্রাম ১ আসনের নৌকার মনোনীত প্রার্থী আসলাম সওদাগর ও কুড়িগ্রাম ২ আসনের মনোনীত প্রার্থী মো: জাফর আলীর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে নির্দেশনা পেয়েছি। এছাড়াও ৪ টি আসন মিলে জাকের পার্টির ৩ জন ও ১ জন স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাদের মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করেছেন।