একটি বিল পাস হওয়া নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে অর্থায়নে করা এ বিলটি পাস না হলে আজ শনিবারের পর (স্থানীয় সময় ১ অক্টোবর মধ্যরাত) বন্ধ হয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম। যা দেশটিতে ‘শাটডাউন’ হিসেবে পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ কংগ্রেস সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য প্রতিবছর ১ অক্টোবর নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দিয়ে থাকে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে থাকা কংগ্রেস অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি আটকে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কাছে তারা দাবি করেছে, সরকারি ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস করতে হবে। তবেই তারা নতুন অর্থবছরের অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দেবে।
এদিকে আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ সিনেটে মাত্র ১ আসনের ব্যবধানে এগিয়ে আছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। অপরদিকে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রিপাবলিকানদের দখলে। ফলে সরকারকে সচল রাখতে হলে দুই দলকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। শনিবারের (৩০ সেপ্টেম্বর) মধ্যে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে দুই দল একমত না হতে পারে তাহলে শাট ডাউন নেমে আসবে এবং অচল হয়ে পড়বে সরকার। বেশিরভাগ সরকারি চাকরিজীবীকে তখন বেতন ছাড়া বাধ্যতামূলককে ছাঁটাই করা হতে পারে। এমনকি শিশুদের পুষ্টি পোগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।
সরকারি ব্যয় অনেক কমাতে হবে জানিয়ে রিপাবলিকানদের একটি বিদ্রোহী অংশ দাবি, এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত ইউক্রেনকেও সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন তারা। এই বিদ্রোহীরা স্পিকার ক্যাভিন ম্যাকার্থিকে এক্ষেত্রে কোনো ধরনের আলোচনা করতে দিচ্ছেন না। ম্যাকার্থি যদিও চাইলে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে এই বরাদ্দের অনুমোদন দিতে পারেন। কিন্তু এতে নিজ দলের আইন প্রণেতাদের দ্বারা স্পিকার পদ হারানোর শঙ্কায় পড়ে যাবেন তিনি।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অচল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে একটি স্বল্পকালীন অর্থ বরাদ্দ বিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে। ওই বিলে ইউক্রেনের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলার এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রিপাবলিকান স্পিকার ক্যাভিন ম্যাকার্থি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, রিপাবলিকানদের হয়ত এখন সিনেটের প্রস্তাবই মেনে নিতে হবে নয়ত সরকার অচল হয়ে পড়ার দায় তাদের উপর আসতে পারে। তবে রিপাবলিকানের বিদ্রোহী সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা পূর্ণকালীন বিল ছাড়া অন্য কোনো কিছুতে রাজি হবেন না।
প্রসঙ্গত, প্রতি অর্থবছর (১ অক্টোবর) শুরুর আগে কংগ্রেসকে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি অনুমোদন দিতে হয়। কিন্তু যদি কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের মোটামুটি ৩০ শতাংশের অনুমোদন দিতে কংগ্রেস ব্যর্থ হয় তখনই সরকার অচল হয়ে পড়ে। যদি এবার এমনটি হয় তাহলে সোমবার থেকে অতিপ্রয়োজনীয় ও জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব খাতের সরকারি চাকরিজীবীদের বসে পড়তে হবে। এমনকি যতক্ষণ পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান না হবে ততক্ষণ সশস্ত্র বাহিনীর ১৪ লাখ সদস্য এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের বেতন ছাড়া কাজ করে যেতে হবে। এদিকে গত এক দশকে আরও তিনবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল মার্কিন সরকার। তবে সেগুলো স্বল্পস্থায়ী ছিল। সূত্র: বিবিসি