বেগমগঞ্জে ধরলার বাম তীরে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ জুড়ে ভাঙন রয়েছে। এতো বড় অংশে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ করার বরাদ্দ নেই, ভাঙনের খবরে আমরা তাৎক্ষণিক ২ হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি- আব্দুল্লাহ আল মামুন, নির্বাহী প্রকৌশলী, পাউবো, কুড়িগ্রাম।
কুড়িগ্রামে হঠাৎ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ধরলা। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানির সাথে তাল মিলিয়ে ধরলা নদীর আগ্রাসনে তীব্র ভাঙনে উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ৫টি বসতভিটা সহ শতাধিক বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভূমি আফিস সহ বসতি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বলছে, রবিবার রাতে ধরলা তীরবর্তী বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের খুদিরকুটি ব্যাপারিপাড়া গ্রামে ধরলার তীব্র ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের তীব্রতায় মানুষ রাত জেগে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে শুরু করেন। এরই মধ্যে করিম বাদশা, লুৎফর মুন্সি, দেওয়ান আলী, মোহাম্মদ আলী ও রোস্তমের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়। কোনও রকমে তারা ঘরের চাল সহ জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে পেরেছেন। এছাড়াও এক রাতেই অন্তত একশ’ বিঘা আবাদি জমি, শত শত গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। এখনও ভাঙন হুমকিতে শতাধিক পরিবার ও স্থাপনা।
কপাল ভালো টের পাইছি। না হইলে মানুষ সুদ্দোয় নদীত ভাসি গেইলং হয়-ভাঙনের শিকার দিনমজুর রোস্তম আলী, বেগমগঞ্জ, উলিপুর।
‘ অবস্থা খুব খারাপ। সামলায় যায় না। কোনটা ধরি কোনটা সরাই। গাছপালা, খড়ের পালা সউক শ্যাষ। খালি ঘরের চালটা করি সরবার পাছি। কাই কারটা সামলায়! এলা যে কোটাই যায়া থাকমো সেটায় কবার পাই না।ধরলার ভাঙনে আকস্মিক ভিটেমাটি হারিয়ে এভাবেই ভাঙনের তীব্রতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা দেওয়ান আলী। রবিবার রাতে ধরলার তীব্র ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছেন এই দিনমজুর। শুধু দেওয়ান আলী নন, তার গ্রামের অনেকের এখন এমন সঙ্গীন অবস্থা।
ভাঙনের শিকার দিনমজুর রোস্তম আলী বলেন, ‘ কপাল ভালো টের পাইছি। না হইলে মানুষ সুদ্দোয় নদীত ভাসি গেইলং হয়। কোনও মতে ঘরগুলা সরবার পাছি। কিন্তু এলা কোটাই যায়া কেমন করি বাস করমো সেই কিনারা পাইতেছি না।’
রাতের ভাঙনের পর সারাদিনে ভাঙন নিয়ে লোকালয়ের দিকে ধীরে অগ্রসর ছিল ধরলা। এর বাম তীরের নিকটবর্তী বসতভিটা ও স্থাপনা ভাঙন হুমকিতে দাঁড়িয়ে আছে। সোমবার দুপুরে কথা হয় ভাঙনের শিকার আরেক দিনমজুর সামেদ আলীর সাথে। তিনি বলেন, ‘ চারটা ঘরের চাল সরে নিয়া স্কুল মাঠত থুচি। ভিটার অর্ধেক গেইছে। একজনের কাছত ঘর তুলি থাকার জন্য জমি চাছি। না দিলে কোটেই থাকমো সে উপায় নাই। ’
ধরলার ভাঙনে হুমকিতে আছে ওই ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুদির কুটি আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়, তৎসংলগ্ন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ভূমি অফিস ও ৪ নং ওয়ার্ডের আক্কেল মামুদ কমিউনিটি ক্লিনিক। এছাড়াও আবাদি জমিসহ বিভিন্ন বসতি ভাঙন হুমকিতে রয়েছে।
অবস্থা খুব খারাপ। সামলায় যায় না। কোনটা ধরি কোনটা সরাই। কাই কারটা সামলায়। এলা যে কোটাই যায়া থাকমো সেটায় কবার পাই না-দেওয়ান আলী, বেগমগঞ্জ, উলিপুর।
৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ কয়েকদিন ধরে ভাঙন চলছে। গত এক দশ দিনে ওয়ার্ডের স্কুল সংলগ্ন ২৯ টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা এখন আরও বাড়ছে। কিন্তু পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আক্তার হোসেন বলেন, ‘ধরলার ভাঙনে এক রাতেই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পরিবার ভিটা হারিয়েছে। অনেক আবাদি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। আমার নিজের বাড়িও ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে অন্তত ১ হাজার মিটার প্রতিরক্ষা কাজ করা প্রয়োজন। তা নাহলে কোনও কিছুই রক্ষা করা যাবে না।’
ভাঙনের খবরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ২ হাজার বস্তা জিও ব্যাগ ফেলার অনুমতি দিয়েছে জানিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ জেলা প্রশাসন ও পাউবো থেকে জরুরী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বেগমগঞ্জে ধরলার বাম তীরে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ জুড়ে ভাঙন রয়েছে। এতো বড় অংশে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ করার বরাদ্দ নেই। ভাঙনের খবরে আমরা তাৎক্ষণিক ২ হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি। স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্থাপনাগুলো রক্ষায় আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
আনন্দবাজার/শহক




