মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এর মধ্যেই শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে পবিত্র জুমার নামাজের খুতবা দিয়েছেন তিনি।
মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেদিন জুমার নামাজ শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন অ্যান্ড্রু ভিনালস নামে স্প্যানিশ এক নাগরিক। আনোয়ার ইব্রাহিমের এমন কাজ সারা মুসলিম বিশ্বে প্রসংসা কুড়িছেছে। শনিবার দ্য নিউ স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দিন জুমার নামাজের আজান দেন যুক্তরাষ্ট্রে সফররত বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশি কারী আহমাদ বিন ইউসুফ আযহারী। এ সময় তিনি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। পরে মসজিদের ইমাম সা’দ জালোহর ইমামতীতে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে দোয়া ও খুতবা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীকে। এ অনুরোধে সাড়া দেন তিনি।
আমরা সব সময় পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহনশীলতা প্রচারের চেষ্টা করি জানিয়ে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, আমরা অন্যদের সংস্কৃতি ও ধর্ম বোঝার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছি, কারণ সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাসের জন্য বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম ঐক্য ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন মুসলিমের জন্য জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা অবশ্য কর্তব্য। অমুসলিমরা যেন আমাদের দেখেই ইসলামে আগ্রহী হয়। আমাদের শুধু ধর্মীয় জ্ঞান লাভ করে থেমে থাকলে চলবে না, আধুনিক প্রযুক্তিখাতেও দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ইসলামোফোবিয়া প্রতিরোধে ‘মালয়েশিয়া মাদানি’ ধারণার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যখন বিভিন্ন দেশে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটছিল, তখন মালয়েশিয়া পবিত্র কোরআনের ১০ লাখ কপি ছাপিয়েছে। এরপর আমরা ১৫ হাজার কপি সুইডেনে পাঠিয়েছি, যেন তারা কোরআন দেখে ও তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে।
মুসলিম বিশ্বের প্রশংসিত নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম আমাদের মসজিদে উপস্থিত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত বলে জানান ইসলামিক সেন্টারের ইমাম সাদ জুল্লাহ। তিনি বলেন, দিনটি আমাদের জন্য ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয়। তিনিই প্রথম কোনো বিশ্বনেতা, যিনি এই সেন্টার পরিদর্শন করেছেন ও জুমার নামাজের খুতবা দিয়েছেন। এসময়, নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। এ সময় ঘোষণা করা হয়- এক ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চান ও ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, ওই ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা যেন মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীর হাতেই হয়। পরে আনোয়ার ইব্রাহিম তাকে শাহাদাহ পড়িয়ে ইসলামে দীক্ষিত করেন।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক মিডিয়া কর্মকর্তা জানান, ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি কাকতালীয়। এটি আমাদের নেতার দাপ্তরিক কার্যক্রমের অংশ ছিল না। আনোয়ার ইব্রাহিম বিভিন্ন সময় নামাজের ইমামতী করে থাকেন। তিনি ইসলামী পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত ও সহিভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারদর্শী। তিনি এবারই প্রথম জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন। তাই তাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমদের বিশেষ আগ্রহ ছিল।