ঢাকা | শুক্রবার
১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের সাথী জোংগৈর

হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের সাথী জোংগৈর

গরমে হাসফাস অথবা বৃষ্টিতে থই থই শহরের মানুষের একমাত্র ভরসা ছাতা। আর গ্রামের গরিব কৃষকদের একমাত্র ভরসা হলো জোংগৈর। গ্রাম বাংলার গরম আর বর্ষায় ফসলের মাঠের ভরসার সাথি ছিলো ছাতা। যার আঞ্চলিক নাম জোংগৈর। গ্রাম বাংলায় জোংগৈর চিনবে না এমন লোক পাওয়া মুশকিল। ছাতার বিপরীতে ব্যবহার করা হতো এই জোংগৈর। জোংগৈর তৈরি করা হয় মূলত বাশঁ, পলিথিন বা তাল পাতা দিয়ে। গ্রাম বাংলায় এই জোংগৈর ছিলো বেশ প্রচলিত। কমপক্ষে ঘরে ২-৪ টা জোংগৈর থাকতো। কালের বিবর্তনে এখন জোংগৈরের কথা বল্লে হয়তো অনেকে চিনবে না। তারা বলবে এটা কি জিনিস?

জানা যায়, তালপাতা দিয়ে তৈরি ডোঙা আকৃতির একটি গ্রামীণ উৎপাদন। গরীব মানুষের বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচানোর সস্তা উপায়। গ্রামীণ এলাকার লোকেরা বর্ষাকালে ছাতার বিকল্প হিসেবে এই “জোংগৈর” ব্যবহার করতো। তাল পাতা ও বাকলের দড়ি দিয়ে বানানো ছাতার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। মাঠে বর্ষার সময় কৃষি কাজের জন্য খুবই উপযোগী। যদি ও আধুনিক যুগে এর ব্যবহার নাই বললেই চলে। যা বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ‘চাষীর বর্ষাতি নামে পরিচিত ছিল । একসময়ে গরমে পাখা আর বর্ষার জোংগৈর ছিল গ্রামীন জীবনের অঙ্গ। বিশেষ করে চাষী পরিবার গুলোতে এর কদর ছিল খুব। গ্রামে জোংগৈর ছিল চাষী পরিবারগুলোর গৃহস্থালির অন্যতম উপকরণ। বাড়ীর দেয়ালে বা দুয়াারে খুঁটিতে পেরেকে ঝোলানো থাকতো এই জোংগৈর ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে আর ডোঙার মতো জোংগৈর মাথায় দিয়ে চাষিরা চাষ করছেন, এ দৃশ্য ধানের জমিতে খুব পরিচিত ছিল। এখন তা বিরল।

গ্রামের বৃদ্ধরা জানান, বাড়ীতে অন্যান্য আসবাব পত্রের অন্যতম ছিল জোংগৈর। এখন শীতকাল এলে যেমন বৈদ্যুতিক পাখা গুছিয়ে রাখা হয় তেমনি বর্ষার শেষে গুছিয়ে রাখতে হত জোংগৈর । আর সে দায়িত্ব নিতে হতো বাড়ীর মহিলাদের। একান্নবর্তী পরিবারে পেখার দায়িত্ব নিতেন প্রবীণা। বর্তমানে এগুলো এখন দেখা ও যায় না। সবাই আধুনিক যুগে এসে ছাতা ব্যবহার করছে। জোংগৈর যেমনে বিলুপ্ত ঠিক তেমনি বিলুপ্ত এই গ্রামীন শব্দটা ও।

সিনিয়র সাংবাদিক আজাদ মালদার বলেন, হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ হস্ত শিল্পের একটি নমুনা জোংগৈর। বর্ষায় আর কদর পায় না তালপাতার জোংগৈর। বর্ষা এলেই একসময় জোংগৈর কেনার জন্য গ্রামে গ্রামে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত । বিশেষ করে চাষী পরিবার গুলোতে এর কদর ছিল খুব। তবে নতুন প্রজন্মের কাছে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়া উচিত নতুবা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে এসব গ্রামীন সংস্কৃতি ও হস্ত এবং কুটিরশিল্প।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন