সম্প্রতি শুটিং সেটে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে দোষী প্রমাণ হওয়ায় ছোটপর্দার অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমককে অভিনয় থেকে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে টেলিভিশন নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড। এ ঘোষণার ব্যাপারে টেলিপ্যাব ও অভিনয় শিল্পী সংঘ আজ (২৩ আগস্ট) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের অবস্থান তুলে ধরে।
দীর্ঘ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘গত ২১ আগস্ট ডিরেক্টরস গিল্ডের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, যা আমাদের বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের কাছ থেকে যা মোটেই আমরা প্রত্যাশা করি না। যেহেতু সংবাদ সম্মেলনে টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘের নাম উচ্চারিত হয়েছে; তাই প্রাসঙ্গিক কারণেই কিছু কথা আমাদের বলতে হচ্ছে, যা আমরা কখনোই সর্বসাধারণের সম্মুখে বলতে চাইনি!
প্রথমত, ডিরেক্টরস গিল্ড একজন অভিনয়শিল্পীকে নিষিদ্ধ করার অধিকার রাখে কি না? যদি তারা তাদের সদস্যদের চমককে কাজে না নেওয়ার নির্দেশ দিতো তবে তা সাংগঠনিকভাবে করতে পারতো। তার জন্য সংবাদ সম্মেলনের প্রয়োজন ছিল কি না!
এটা খুবই সাধারণ বিষয় যে একটি পেশাদার সংগঠন শুধু তার সংগঠনের সদস্য ছাড়া অন্য কোনো পেশার শিল্পী, কলাকুশলী বা ব্যাক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে পারে না! নিতান্ত প্রয়োজন হলে সেই পেশার সংগঠনের সাথে আলোচনা করতে পারে। সংগঠন কোনো কোর্ট কাচারি-আইন আদালত নয়। সংগঠনকে সদস্যরা ভয় পাবে না, ভালোবাসবে-নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে। কেউ কেউ কখনো কখনো ভুল করতে পারে, অন্যায় করতে পারে। আমরা তাকে সংশোধনের চেষ্টা করব, সঠিক পথ বাতলে দেবার চেষ্টা করব। কিন্তু কখনোই গলা টিপে ধরব না। ভুল শুধরে নেওয়ার, সংশোধন হওয়ার যথেষ্ট সময়, সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি সংশোধন না হয় তখন হয়তো সংগঠন কঠোর হতে পারে। তার আগে নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘ডিরেক্টরস গিল্ডের সংবাদ সম্মেলনের তথ্য অনুযায়ী অভিনয়শিল্পী চমকের বিষয়ে টেলিপ্যাব, ডিরেক্টরস গিল্ড এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ আন্তঃ সাংগাঠনিক মিটিং করে। সেখানে নানান সিদ্ধান্ত নিয়েই আলোচনা হয়। নিষেধাজ্ঞাও এর মধ্যে ছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে নাটকটি আটকে যেতো। চমক সব সংগঠনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের ভুল অনুধাবন করে অনুতপ্ত হয়েছে এবং আমরা যে শাস্তি তাকে দিয়েছি সে তা মাথা পেতে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা প্রযোজক পরিচালক সহশিল্পীদ্বয় যারা অভিযোগ করেছেন তারা সবাই এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। প্রযোজক আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেলেন। পরিচালক তার নাটক শেষ করতে পারছেন। এবং সহশিল্পীরাও চমকের অনুতপ্ত হওয়া ও দুঃখ প্রকাশ করাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এরচেয়ে ভালো আর কি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা সিদ্ধান্ত ঘোষণার পূর্বে তিন সংঠনের শীর্ষ নেতারা মিটিং থেকে বের হয়ে টেলিপ্যাব অফিসে আলাদাভাবে বসে অভিযোগকারী সবার সাথে কথা বলে তাদের প্রত্যাশিত চাওয়া সমুহ আমলে নিয়ে যৌক্তিকতা, বাস্তবতা ও কার্যকারিতার কথা বিবেচনা করে যে চারটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলেন তা নিজ হাতে লিখেছেন ডিরেক্টরস গিল্ডের অভিযোগ উপকমিটির আহ্বায়ক, গিল্ডের সহ-সভাপতি আশরাফুল আলম রন্টু এবং টেলপ্যাব সভাপতি মনোয়ার পাঠান একে একে চারটি পয়েন্ট স্পস্টভাবে পুনরায় পড়ে শোনানোর পর এগুলো ঘোষণার জন্য সবাই মিটিংরুমে বসেন এবং টেলিপ্যাব সভাপতি এবং সভার সভাপতি গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো যখন ঘোষণা করেন তখন হঠাৎ করে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক বলেন আমি আমার ইসির সাথে কথা বলেছি, ইসি মানছে না, চমককে নিষিদ্ধও করতে হবে। তিন সংগঠনের মিটিংয়ে যেহেতু টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘ গৃহীত সিদ্ধান্তের সাথে একমত তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেও এ সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বিবেচিত হয়।
সভাপতি সহ-সভাপতির সিদ্ধান্তের সাথে একমত নন সাধারণ সম্পাদক এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। যখন সিদ্ধান্ত হয় তখন সাধারণ সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি কথা বললেন না। খুবই নাটকীয় কায়দায় তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দর গৃহীত সিদ্ধান্ত আমলে না নিয়ে বললেন ঘোষণার সময়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’ শিল্পীদের সংগঠনটি আরও দাবি করেছে, চমকের বিরুদ্ধে ডিরেক্টরস গিল্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা তাদের ব্যক্তিগত। এ সিদ্ধান্তের সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই- আমাদের সিদ্ধান্তে চমকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কোনো কথা নেই।
টেলিভিশন মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের একটি ফেডারেশন আছে- ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)। যার সদস্য টেলিপ্যাব, ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয় শিল্পী সংঘসহ সবাই। এফটিপিও’র গঠনতন্ত্রে আছে- সংঠনগুলোর মধ্যে কোনো বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারলে বা কোনো জটিলতা তৈরি হলে তা ফেডারেশনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘের সাথে ডিরেক্টরস গিল্ড একমত না হতেই পারে। সেক্ষেত্রে তারা এফটিপিও এর কাছে সমাধান চাইতে পারতো। তা না করে তাদের সরাসরি প্রেস কনফারেন্সে চলে গেলেন।
আমরা কোনো পাল্টা কনফারেন্স করছি না। এমনকি এ কথাগুলোও আমরা বলতে চাইনি। কিন্তু বাধ্য হলাম। বছরের পর বছর ধরে অনেক পরিচালকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে আছে এবং এগুলোর প্রতিকারের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ ডিরেক্টরস গিল্ডের নেই। আমরা আমাদের অভিভাবক ফেডারেশন এফটিপিও’র সভাপতি মামুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন লাভলুর সাথে কথা বলেছি। সভাপতি দেশের বাইরে থাকায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর এফটিপিও’র সঙ্গে সভা হবে। সেখানে এ এবিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করি এফটিপিও একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান দেবে। সবশেষে টেলিপ্যাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম এস কে সানজিদ খান প্রিন্স ও অভিনয়শিল্পী সংঘের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রাণ রায় স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা সবগুলো সংগঠন পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে অনেক বড় বড় সংকট মোকাবিলা করে এসেছি। সামান্য বিষয়ে এ পরিস্থিতি সত্যই দুঃখজনক এবং বিব্রতকর।’ বিজ্ঞপ্তির আলোচ্য বিষয়গুলোর প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে ডিরেক্টরস গিল্ডের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।