ঢাকা | বুধবার
৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নার্সারিতে মমতাজের স্বপ্নচাষ

নার্সারিতে মমতাজের স্বপ্নচাষ

দৃঢ় মনোবল আর অদম্য ইচ্ছেশক্তিই পারে মানুষকে সফলতার শিঁকড়ে পৌঁছাতে। তেমনি এক নারীর নাম মমতাজ আক্তার। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। শুরু হয় দাম্পত্য জীবন। তবে বন্ধ হয়নি লেখাপড়া। এখন পড়ছেন ডিগ্রিতে। এর পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তাও এই গৃহবধূ।

সংগ্রামী এই মমতাজ আক্তারের বাড়ি গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক বেলাল মিয়ার স্ত্রী। তিনি সংসার জীবনের পাশাপাশি লেখাপড়া অব্যাহত রেখে বানিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন নার্সারী। আরও করছেন গরু-ছাগল ও হাঁস পালন। এ থেকে দারিদ্রতাকে বিদায় দিয়ে ঘুরিছেন ভাগ্যের চাকা।

জানা যায়, কয়েক বছর আগে দূর্গাপুর গ্রামের বেলাল মিয়ার সঙ্গে মততাজ আক্তারের বিয়ে হয়। এরপর সংসার জীবনে ভালো কিছু করার পরিকল্পনা নেন তিনি। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০১৯ সালে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখান ধেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজস্ব ১৫ শতক জমির ওপর নার্সারি গড়ে তোলেন। বছরখানেক পর এখান থেকে লাভের মুখ দেখায় এখন প্রায় ২ একর জমিতে নার্সারি গড়ে ওঠেছে তার। বর্তমানের তার নার্সারিতে প্রতিদিন ১০ জন শ্রমিক কাজ করছে।

এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে ফের গবাদিপশু পালন বিষয়ে একমাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করেছেন। এখন তার খামারে গরু বিক্রি শেষেও আরও ৮ টি বিদেশি জাতের গরু রয়েছে। এরই মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করে বতর্মানে ডিগ্রিতে অধ্যায়নরত রয়েছেন।
অপরদিকে, গরুর খামারের গোবর দিয়ে তিনি ভার্মিকম্পোষ্ট সার উৎপাদন করছেন। মমতাজের তৈরী ভার্মিকম্পোষ্ট সার স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর পাশাপাশি ছাগল ও হাঁসের খামারও গড়ে তুলেছেন। এর নাম দিয়েছেন মেসার্স “আলিফ সম্মিলিত কৃষি খামার “। সবমিলে এখন তার মাসিক আয় লাখ টাকা।

এই নার্সারির শ্রমিক আমিরুল ইসলাম বলেন, আগে কাজের সন্ধানে যেখানে-সেখানে ঘুরতে হয়েছে। বর্তমানে মমতাজ আপার নার্সারিতে নিয়মিত কাজ করে দৈনিক মজুরি পাই ৪৫০ টাকা। এ দিয়ে সংসারে অভাব কমেছে।

স্থানীয় শিক্ষক আজগর আলী বলেন, মেয়েটি আসলে খুবই কর্মঠ। সে যা কিছুই করছেন তাতেই যেনো সোনা ফলছে। তার দেখাদেখি এ গ্রামের আইনুল ও রফিকুলসহ আরও অনেকে নার্সারি করে সফলতা আর্জন করেছেন।

উদ্যোক্তা মমতাজ আক্তার বলেন, শিশুকাল থেকে নিজেকে লেখাপড়া করে আত্মকর্মসংস্থানের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন থেকে বিয়ের পর স্বামীর সার্বিক সহযোগিতা লেখাপড়া চলমান রেখে কৃষি কাজে ঝুঁকে পড়েছি। এখান থেকে আমাদের পরিবার এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী।

সংগ্রামী মমতাজ আক্তারের স্বামী বেলাল মিয়া বলেন, আমি নিজেও একজন কৃষক। স্ত্রীর অদম্য ইচ্ছেশক্তি থেকে তাকে সবদিক দিয়ে সহযোগিতা করছি। এক সময় আমাদের সংসারের অভাব-অনটন থাকলেও এখন আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।

এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সত্যও সাহা বলেন, মমতাজ আক্তারের সঠিক পরিকল্পনা ও ভালো প্রতিভা রয়েছে। এ থেকে তাকে দাপ্তরিকভাবে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন