ঢাকা | বুধবার
৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উলিপুরে মুখীকচুতে কৃষকের মুখে হাসি

উলিপুরে মুখীকচুতে কৃষকের মুখে হাসি

কুড়িগ্রামের উলিপুরে মুখীকচু চাষ করে আশানুরূপ ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। অন্য চাষের তুলনায় কচু চাষে রোগবালাই কম হয়। সারও কম দেওয়া লাগে। উপজেলায় পাইকারি বাজার সৃষ্টি হওয়ায় সময় বাঁচে, দুর্ভোগও কমে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কচু চাষে ঝুঁকছেন সেখানকার কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় মুখীকচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারদর ভালো থাকায় খুশি কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবারে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা ছিল প্রায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর। যা অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টরের বেশি। এর মধে মুখীকচু চাষও রয়েছে। এখন বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ প্রায় শেষের দিকে। এ ছাড়া উঁচু জমিতে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। তার মধ্যে মুখীকচু চাষে অল্প খরচে অল্প সময়ে বেশি লাভ পাওয়া যায়। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে মুখীকচু চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মুখীকচুর বাম্পার ফলন হওয়ায় কচু উঠাতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির আমদানি কমে যাওয়ায় মুখীকচুর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা জানান, এবারে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় মুখীকচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া বাজারদর ভালো থাকায় অনেক খুশি কৃষকেরা। অল্প খরচে রোগবালাই ও পোকামাকড় মুক্ত মুখীকচু চাষে দিনে দিনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এ উপজেলার কৃষকেরা।

থেতরাই ইউনিয়নের কিশোরপুর বকশিপাড়া গ্রামের সবজিচাষি আবদুল আব্দুল জলিল বলেন, ‘এ বছর আমি এক বিঘা জমিতে কচু আবাদ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। জমি প্রস্তুত থেকে এ পর্যন্ত সব মিলে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলন হওয়ায় এক বিঘা জমিতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মণ কচু উৎপাদন হবে। আমার জমি থেকে কচু ওঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। বাজার জাত করা হচ্ছে। সব কচু উঠাতে আরও প্রায় ১০ দিন সময় লাগবে। এখন বাজারে প্রতি মণ কচু ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খরচ বাদে প্রায় ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে।

সাতদরগাহ বকশিপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার জানান, আমি ১৭ শতক জমিতে মুখিকচুর চাষ করেছি। বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার জাত করা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার মুখিকচু বিক্রি করেছি। আশা করি আরও প্রায় ৫০ হাজার টাকার মুখিকচু বিক্রি করা যাবে।

পশিম হারুনেফড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, আমি প্রায় ৪০ শতক জমিতে মুখিকচুর চাষ করেছি। বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করি ৬০ থেকে ৭০ মণ কচু পাব। যা খরচ হয়েছে তার থেকে দ্বিগুন লাভ হবে।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মুখিকচু চাষিদের মধ্যে আইয়ুব আলী, কাশেম মিয়া, নবাব মিয়া ও শফিকুল ইসলাম সহ আরও অনেকে বলেন, এবারে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় মুখীকচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে অন্যান্য সবজির আমদানি কমে যাওয়ায় মুখীকচুর চাহিদা অনেক বেড়েছে। দাম ভালো থাকায় আমরা
অনেক লভবান হতে পারব বলে জানান তারা।

উপজেলার পাইকেরি বাজারের সবজি ব্যাবসায়ী মজুর উদ্দিন বলেন, স্থানীয় ভাবে মুখীকচুর চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কিছুটা চাহিদা পুরুন করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমান মুখীকচুর বাজারদর অনেক ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, মুখীকচু চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা ও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। উৎপাদিত পণ্য সহজলভ্যভাবে বিক্রির জন্য উপজেলায় পাইকারি বাজার সৃষ্টির কারণে মুখীকচুর চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে মুখীকচু চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলে মুখীকচু চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান বাজারদর ভালো থাকায় অনেক লাভবান হবেন চাষিরা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন