ঢাকা | বুধবার
১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আখাউড়ায় সজনের ডাটা ফলনে খুশি কৃষক

আখাউড়ায় সজনের ডাটা ফলনে খুশি কৃষক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় সজনের ডাটার ভালো ফলন হয়েছে। পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির পাশে পুকুর পাড়, রাস্তার পাশে ওই সব সজনের গাছ লাগানো হয়।  এ মৌসুমে প্রাকৃতিক ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি গাছে ভালো ফলন এসেছে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি সজনের ডাটা  ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই সজনের ডাটা সাধারণ মানুষের নিকট ভালো চাহিদা ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা বেজায় খুশি।  সজনের ডাটা পুষ্টিগুণ সম্বৃদ্ধ হওয়ায় অনেকেই গাছ রোপন করে যত্নশীল হয়ে উঠছে।

একাধিক কৃষক জানায়, পুষ্টিগুণ সম্বৃদ্ধ এই সজনা চাষে কোন উৎপাদন খরচ নেই। অধিক লাভজনক এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায়  এ চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। পুষ্টিগুণ সম্বৃদ্ধ জাদুকরি সবজি এই সজনে ডাটা  এখনও কৃষিভিত্তিক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু না হলেও স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে মুখরোচক সজনে ডাটার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। অন্য সবজির চেয়ে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় সজনে যেকোনো বয়সের মানুষ খেতে ভালোবাসে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানায়,  সজনের ডাটাতে  আ্যানিমিয়া, জয়েন্ট পেইন, ক্যান্সার, কোষ্টকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, হার্ডপেইন, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে পাথর ধ্বংস, মায়ের দুধ বৃদ্ধি করাসহ বিভিন্ন ঔষুধি গুণাগুণ রয়েছে। সজনের গাছকে প্রচলিত বিভিন্ন খাদ্য প্রজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন উদ্ভিদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের মো: আমজাদ হোসেন বলেন, পুকুরপাড় ও রাস্তার পাশে তার ৬টি সজনের গাছ রয়েছে। ৬টি গাছে এ বছর ২ মণের উপর সজনের ফলন আসে।  নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তার আত্মীয় স্বজন ও পাড়ার প্রতিবেশীদের মাঝে দেওয়া হয়।  তার গাছের ফলন দেখে  অনেকেই সজনে চাষে আগ্রহশীল হয়ে উঠছে।

তিনি আরও সজনে  উৎপাদনের উপর চাষীদের কোন খরচ হয়না। ফলে গাছ থেকে যতটুকু সজনের ডাটা উৎপাদন হয় তার সবটুকুই  লাভ। কৃষক রমজান মিয়া বলেন তার বাড়ির চারপাশে ৫টি সজনে গাছ রয়েছে। প্রাকৃতিক ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি গাছে ভালো ফলন হয়। প্রথমে প্রতিকেজি সজনে ডাটা স্থানীয় বাজারে ৯০টাকা কেজি বিক্রি  হলে ও বর্তমানে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ পযর্ন্ত তিনি ৪ হাজার টাকার সজনে বিক্রি করেছেন বলে জানায়।

নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আরো ২ হাজার টাকার উপর বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। আজমপুর এলাকার কৃষক  আব্দুল আওয়াল মিয়া বলেন, নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়ির পাশে বেশ কয়েকটি গাছ লাগানো হয়। গত ৩ বছর ধরে গাছে ভালো ফলন আসে। স্থানীয় বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় এ পযর্ন্ত ৩ হাজার টাকার সজনে বিক্রি করেন।

তিনি আরও বলেন, সজনে ডাটা এমন এক ধরনের গাছ যা গাছের ডাল লাগালেই হয়। পরিচর্যা বলতে লাগানোর পর কয়েকদিন কয়েক বালতি পানি দিলেই মাটিতে গাছ লেগে যায়। এর প্রধান শত্রু হচ্ছে ঝড়। তবে ঝড়ে যদি ডাল ভেঙ্গে যায় তাতে সমস্যা নাই যদি গাছটা ঝড়ে উপড়াতে না পারে।

উপজেলা  কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম  বলেন, পুষ্টিগুণের দিক থেকে সজনা অত্যন্ত  উপকারী একটি সবজি। অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রে পরিচর্যার প্রয়োজন হলেও অনেকটা পরিচর্যা ছাড়াই সজনার উৎপাদন সম্ভব। সজনা অল্প দিনেই খাওয়ার উপযোগী হয় এবং বাজারজাত করা যায়। খেতে সুস্বাদু ও বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় সবজির আবাদ অত্যন্ত লাভজনক ।  তিনি আরও বলেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সজনের  ফলন ভালো হয়েছে। এ উপজেলায় অনেকের বাড়িতে কমবেশি সজনের গাছ আছে। সজনের ডাকা  পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজনের ক্ষেত গড়ে তুলতে উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন