স্ক্র্যাপ করা প্লাস্টিক থেকে মাসে লাখ টাকা আয় করছেন উদ্যোক্তা ফরিদুল ইসলাম। বর্তমানে তার কারখানায় প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ টন স্ক্র্যাপ করা প্লাস্টিকের টুকরা তৈরি হয়। যেটির গড় আনুমানিক বাজার মূল্য ১ থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি।
উদ্যোক্তা ফরিদুল ইসলাম শেরপুরের নকলা উপজেলার পৌরশহরের গড়েরগাও এলাকার বাসিন্দা। ১৯৮৫ সালে তিনি ঢাকার ইসলামাবাগে একটি প্লাস্টিকের কারখানায় চাকরি করতেন। এরপর ঢাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৬ সালে ফিরে আসেন নিজ জেলায়। সেখানেই অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। গড়ে তুলেন নিয়ামুল সোহান প্লাস্টিক কোম্পানি নামে একটি কারখানা। ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে আনেন প্লাস্টিক বোতল স্ক্র্যাপ করার মেশিন। তিনি ফেলে দেওয়া বিভিন্ন প্লাস্টিকের আসবাবপত্রের টুকরা, কোমল পানীয় ও সয়াবিনের বোতল জেলার নালিতাবাড়ী, নকলা, চন্দ্রকোনাসহ আশপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করে থাকেন।
এসব প্লাস্টিক পণ্য সংগ্রহ করতে ফরিদুল ইসলামকে সহযোগিতা করেন কয়েকজন যুবক। যাদেরকে তিনি দৈনিক ৩শ থেকে ৫শ টাকা মজুরি দেন। শ্রমিকেরা জেলার বিভিন্নস্থান থেকে ছোট কোমল পানীয়ের বোতল প্লাস্টিকের বিভিন্ন টুকরো (ভাঙা চেয়ার টেবিল বা আসবাবপত্র) নামমাত্র মূল্যে কিনে থাকেন। এরপর কারখানায় সেসব প্লাস্টিকের পণ্যগুলোকে রং অনুযায়ী আলাদা করা হয়। আলাদা করার পর প্লাস্টিকের ভাঙা অংশগুলো স্ক্র্যাপ করার মেশিনে দিয়ে টুকরা করা হয়। পরে পুনরায় সেগুলোকে রং করা হয়। এরপর ২ থেকে ৩ দিন প্লাস্টিকের টুকরাগুলোকে প্রখর রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।
জানা যায়, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের কেনার মতো বিক্রিরও ভিন্নতা রয়েছে। ছোট কোমল পানীয়ের স্ক্র্যাপ করা টুকরা ১৫-২০ টাকা, বড় টুকরা ৩০-৪০ টাকা এবং প্লাস্টিকের বিভিন্ন টুকরো (ভাঙা চেয়ার টেবিল বা আসবাবপত্রের) ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। প্রসেসিংয়ের পর প্লাস্টিকের স্ক্র্যাপ করা টুকরাগুলো পার্শ্ববর্তী জেলা জামালপুর, ময়মসমনসিংহ ও ঢাকাতে বিক্রি হয়। এছাড়া বোতলজাত কোমল পানীয় ও ভোজ্যতেলের স্ক্র্যাপ করা টুকরো রপ্তানি হয় চীনসহ বিভিন্ন দেশে। এই কারখানায় ২০ জন নারী-পুরুষ নিয়মিত কর্মচারী কাজ করায় তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
নিয়ামুল সোহান প্লাস্টিক কোম্পানির মালিক ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমি ঢাকার ইসলামাবাগে একটি প্লাস্টিকের কারখানায় চাকরি করতাম। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর চিন্তা করি আমার নিজ জেলাতে প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তাই শেরপুরের নকলায় আমার বাড়ির পাশে ঢাকার ইসলামাবাগ থেকে স্ক্র্যাপ মেশিন কিনে প্লাস্টিক কারখানার কাজ শুরু করি। প্রতি মাসে আমার কারখানায় ১০ থেকে ১৫ টন স্ক্র্যাপ করা প্লাস্টিক টুকরো তৈরি হয়। প্রতি মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার মতো আয় হয়।
কারখানা শ্রমিক রফিক মিয়া বলেন, আমাদের নির্দিষ্ট কোনো কর্ম ছিল না। যখন যেটা পেতাম সেটাই করতাম। এখন দীর্ঘদিন থেকে এই প্লাস্টিক ভাঙার কাজ করছি। এখানে আমাদের মোট ২০ জন শ্রমিকের ভালো বেতনে নিয়মিত কাজের সুযোগ হয়েছে। শ্রমিক লতিফ মিয়া বলেন, আমি কিছুদিন গাড়ি চালিয়েছি পরের কিছুদিন কাঠমিস্ত্রীর কাজও করেছি। কিন্তু তেমন কাজ না থাকায় ভাঙারির কাজ করি। এই জায়গা থেকে যা পাই তা দিয়ে সংসার চলে।
প্লাস্টিক কারখানা দেখতে আসা যুবক রাসেল মিয়া বলেন, ফরিদুল কাকা প্লাস্টিক গলিয়ে প্রসেসিং করে বিক্রি করে থাকেন। তিনি অল্প পুঁজিতেই লাভবান হচ্ছেন। এই ব্যবসা করতে তেমন টাকা লাগে না। অল্প টাকায় ব্যবসা করে ভালো টাকা আয় করা যায়। আমি দেখে গেলাম। আমার এই ব্যবসা করার ইচ্ছা আছে।
শেরপুর বিসিক শিল্পনগরীর ম্যানেজার আতাউর রহমান ফকির বলেন, উদ্যোক্তাদের শেরপুর বিসিক কার্যালয় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করা হয়। আমরা উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেই। তারা যেন ব্যবসার পরিধি বড় করে লাভবান হতে পারে। ফরিদুল ইসলামের সরকারি কোনো সাহায্যের দরকার হলে, আমরা তাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করার চেষ্টা করবো।
আনন্দবাজার/কআ