মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের আড়িয়াল বিল এলাকার মদনখালীতে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে পুণঃখননকৃত খালের পাড়সহ অসংখ্য ফসলী জমির উর্বর মাটি লুট হচ্ছে।
আড়িয়াল বিলের মদনখালী খাল সংলগ্ন অন্তত ১০/১২টি স্ক্যাভেটর (ভেক্যু) দিয়ে এসব মাটি কাটা হচ্ছে। এতে আড়িয়াল বিলের বুক চিরে আলমপুর-মদনখালী খালটি এখন হুমকির মুখে। মাটি খেকোরা যত্রতত্রভাবে খালপাড়ের মাটি কেটে নেওয়ায় জোয়ারের পানি উপচে ধানী জমি ডুবে ফসল নষ্টের শঙ্কায় পড়েছেন অসংখ্য কৃষক। ওই এলাকার সেলিম খান নামে এক প্রভাবশালীর নেতৃত্বে মাটি লুটের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির ছত্রছাঁয়ায় ভাগিনা মাইকেল মিয়া ও মদনখালীর চিহ্নিত মাটি খেকো তাছু মিয়া আড়িয়াল বিলে মাটি লুটের রাজত্ব কায়েম করছেন। অবৈধ এই কর্মযজ্ঞের আড়ালে মদনখালী খাল পাড়েই অস্থায়ীভাবে বেশ কয়েকটি ডেরা ঘর স্থাপন বসানো হচ্ছে মাদক ও জুয়ারীদের আসর। প্রকাশ্যে এসব বিষয় সব দেখেও সাধারণ মানুষ প্রভাবশালী মাটি খেকো সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের ভয়ে কিছু বলতে সাহস পান না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মদনখালীর সাবেক ইট ভাটা সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ খালটির দুই পাড়ের বিভিন্ন অংশের মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। ভেক্যু দিয়ে মাটি কাটার ফলে খাল পাড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এতে খালে জোয়ারের পানি উপচে যেকোন সময় আগাম ধানের জমি ডুবার শঙ্কা করা হচ্ছে। অপরদিকে অসংখ্য ফসলী জমির টপসয়েল কেটে বিশালাকার স্তুপ করা হচ্ছে। এখানে সরকারের নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছেনা। চলমান দৃশ্য দেখে মনে হবে আড়িয়াল বিল যেনে মাটি খেকোদের দখলে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, গেলো বছর খালপাড়ের মাটি কেটে নেওয়া হঠাৎ জোয়ারের পানিতে পাকা ধান ডুবে নষ্ট হয়েছে। এবারও মাটি খেকো চক্রটি গত ১৫দিন ধরে খালের পাড়সহ ধানী জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। প্রতিবাদ করলে হিতে বিপরীত হবে। তাদের ভয়ে কেউই প্রতিবাদ করবেন না। প্রভাবশালী সেলিম খান ও তার ভাগিনা মাইকেল মিয়া ১৪০ ফুট প্রস্তুত খালটির প্রায় ৬০ ফুট দখল করে ডাঙ্গা (পুকুর) খনন করেছেন। মাইকেলের অন্যতম সহযোগী তাছু বিলের বিভিন্ন জমির পাশে অসংখ্য মাটির স্তুপ করে রাখছেন। এসব মাটি বর্ষায় ইট ভাটায় বিক্রি করা হবে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত বছর খালের পাড় কাটায় আড়িয়াল বিলের মদনখালীতে প্রায় ৪শত’ হেক্টর জমির পাকা ধান তরিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আত্মনার্তের খবরে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশনে আসেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া এবারও খাল পাড়ের মাটি লুটে মেতে উঠেছে চক্রটি। উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মল্লিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত বছর খাল পাড়ের মাটির কাটার ফলে কৃষকদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ডুবে যাওয়া জমির একটি ফসলও কাটা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসানের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। এবারও মাটি কাটা হচ্ছে বলে আমি শুনেছি তবে ঘটনাস্থলে যায়নি।
অভিযুক্ত সেলিম খানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দম্ভ করে বলেন, আমার জায়গা আমি কাটছি। এখানে খালের কোন জায়গা নেই। কারও কাছ থেকে অনুমোতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনা। মাইকেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খালের পাড়া আমি ঠিক করে দিবো।
বাড়ৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেন বলেন, গতবার জোয়ারের পানিতে ফসল তলিয়ে যায়। তখন আমি উপজেলা প্রশাসনের মিটিং বিষয়টি উত্থাপন করি। এ বছরও খাল পাড় ও ফসলী জমির মাটি লুটের বষয়টি জানতে পেরে উপজেলার মাসিক সভায় বলেছি। অদৃশ্য কারণে এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রানী জানান, ঘটনাস্থলে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি অফিসারকে পাঠাচ্ছি। কোন কৃষক লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী এ ব্যাপারে বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। উপজেলা ভূমি অফিসকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার/কআ