ঢাকা | বুধবার
১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরিষা চাষে কৃষকের মুখে আনন্দের হাঁসি      

সরিষার ফলনে খুশি চাষিরা

পৌষের সকালের মিষ্টি রোদে ঝলমল করা সরিষা ফুলের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। গাঢ হলুদে সোনালি মিষ্টি রোদ মিলেমিশে এ এক অনিন্দ্য সৌন্দর্য। চোখ জুড়ানো হলুদের মেলা প্রকৃতিকে সাজিয়েছে অপরূপ সাজে সাজিয়েছে ফসিল মাঠ। মাঠের পর মাঠ যেন শুধু সর্ষে ফুলের হলুদ হাঁসিতে রাঙিয়ে দিয়েছে পুরো এলাকা।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা  সরিষার হলুদ ফুলে সজ্জিত বিস্তির্ণ মাঠ। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। ক্ষেতের পর ক্ষেতে সরিষা ফুলের এমনই নয়নাভিরাম দৃশ্য। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। মন চায় সেই হলুদের মাঝে হারিয়ে যেতে। সরিষার ক্ষেতে ছবি তুলতে দলবেঁধে ছুটে আসছে স্কুলের ছাত্র, তরুন, শিশু এমনকি না না পেশার মানুষ। নিজেদের পছন্দমত ছবি তুলছে মোবাইল ও ক্যামেরায়।

উপজেলার যে কোনো এলাকায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সরিষার হলুদ ফুলের সীমাহীন মাঠ। দুর থেকে ভেসে আসছে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ। মধু সংগ্রহে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌ মাছির দল গুলো। তাদের গুনগুন সুরে বিমোহিত চারদিক। মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের অপরুপ সৌন্দর্যে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাঁসি। প্রতিটি সরিষার ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। হলুদের মাঠে কৃষকের অনেক স্বপ্ন খেলা করছে এখন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছেন এ উপজেলার কৃষকরা। কৃষকের চোখে এখন লাভের হাতছানি। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এ বছর কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষা চাষে কৃষকরা দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় গত বছরে ২৩৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী অর্জিত হয়ে ২৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বারি সরিষা ১৪. বারি সরিষা ১৭, বিনা সরিষা ৯ এবং টরি-৭ জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এতে আশা করেছেন সদর উপজেলায় প্রায় ৪২০০ মেট্রিকটন সরিষা  ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষি অফিস। চলতি রবিশস্য মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সরিষাক্ষেতে রোগবালাই কম হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে আগামীতে আরও সরিষার আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করছে উপজেলা কৃষি অফিস। সরেজমিন গত শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় সকালে বিভিন্ন সরিষাক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, হলুদ ফুলে ভরে গেছে পুরো এলাকা। দিগন্ত জুড়ে শুধু হলুদের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ যেন হলুদের গালিচা। সরিষার ফুলে ফুলে মৌঁমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌঁমাছির গুনগুনানিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে সরিষার মাঠ। উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের ঝিনাইগাতি গ্রামের আঃ মতিন, বলিদহ গ্রামের ইয়াছিন আরাফাত, বলিদহ গ্রামের মোস্তাহার আলী জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে

আমরা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। তারা আরও বলেন, সরকারি অনুদান সহ খোলা বাজারে সার পেয়ে কোন সংকট সৃষ্টি হয় নাই। আমরা সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে সরিষা চাষ করেছি আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। । উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.আবু আউয়াল বলেন, এবছর উপজেলায় সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। কৃষি অফিসের সার্বিক নির্দেশনায় কৃষক যেন সরিষার ভালো ফলন পায় সেইজন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। তিনি আরও বলেন, ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৫ শো প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষককে সরিষার বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ভালো ফলনের লক্ষে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সংবাদটি শেয়ার করুন