ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুবাইয়ে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়

দুবাইয়ে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়

মধ্যপ্রাচ্যর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক নগরী তার চাকচিক্য বরাবরের মতোই পর্যটকদের কাছে টানে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে গড়ে উঠা এই মহাযজ্ঞের মহানগরী যতটা না সুন্দর দিনে তার চেয়েও বেশি সুন্দর রাতে। পর্যটকরা এই নগরীর মোহে পড়ে একে রাতের শহর বলেও আখ্যা দিয়েছেন। জেলে পল্লী থেকে শতাব্দীর সেরা শহরে গড়ে তুলতে সবছেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ব্যাপার ছিলো ভিনদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর শতভাগ নিশ্চিত করে থাকে দেশটির শাসকেরা।

সাম্প্রতিক খ্রিষ্টীয় ক্রিসমাস ডে’র ছুটিকে ঘিরে দেশটিতে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। বিশেষ করে কাতারে শেষ হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের আমেজ এখনো কাটেনি মধ্যপ্রাচ্য কাতারের প্রতিবেশীদের। দুবাইয়ের বিমানবন্দর সময়ের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রীষ্ম প্রধান দুই ঋতুর এই দেশে শীতের আগমনের বার্তা যেন অতিথি পাখির ন্যায় পর্যটকদের কাছে টানে।

বর্তমানে দুবাইয়ে চলছে বৈশ্বিক মেলা ‘গ্লোবাল ভিলেজ’। এতে স্থান পায় বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, দর্শনীয় স্থাপনার প্রতিকৃত এর পাশাপাশি তাদের মুখরোচক খাবার, পণ্যদ্রব্য, বিলাসবহুল পণ্য। এর পাশাপাশি থেমে থেমে চলতে থাকে বিভিন্ন দেশের স্ব স্ব সংস্কৃতিক পরিবেশনা ও সার্কাস। এক কথায় প্রতিবছর ছয় মাস ধরে চলতে থাকা বৈশ্বিক এই মেলায় আপনি পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন নিমিষেই।

তবে দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য বৈশ্বিক এই মেলায় অংশগ্রহণ নেই দেশটিতে অবস্থানরত তৃতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের! এখানে প্রতিদিন হাজারো ভিনদেশি পর্যটকদের ভিড়ে থাকেন বাংলাদেশিরাও তবুও নেই বাংলাদেশের অংশগ্রহণ। এ বিষয় নিয়ে দেশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তহতে দুবাইয়ে ঘুরতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশি ও ভিনদেশি পর্যটকরাও এমন আয়োজনে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অংশ নিবে বলে আশা প্রকাশ করেন। সাম্প্রতিক ঢাকাই সিনেমার নায়িকা বর্ষা পরিবার নিয়ে দুবাইয়ে আসেন। তিনি এতবড় বৈশ্বিক আয়োজনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন।

গ্লোবাল ভিলেজ ছাড়াও উন্মুক্ত করা হয়েছে শারজাহ সাফারি, দুবাই মিরাকল গার্ডেন। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের জন্য রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গভীরতম কৃত্রিম সুইমিংপুল। যেখানে সাঁতারের পাশাপাশি পর্যটকরা পানিতেই বিভিন্ন ক্রীড়া বিনোদনে অংশগ্রহণ ও রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণের অভিজ্ঞতা নিতে পারবে। শীতের এই মৌসুমে নিজদেশের অতিমাত্রায় ঠাণ্ডা এড়াতে বিশেষত শীত প্রধানদেশ ইউরোপের পর্যটকরা ছুটি কাটাতে এখানে বেশি ভিড় জমায়। তাদের আকর্ষণের অন্যতম কৃত্রিম স্থাপত্য হলো ‘দুবাই পাম জুমাইরাহ’ জুমেরা কৃত্রিম দ্বীপ, জাজিরাসহ বিভিন্ন আইচল্যান্ড সমূহ।

বর্তমানে দুবাই তাদের অর্থনীতি ও স্থাপত্যর পাশাপাশি প্রযুক্তিকেও শীর্ষে আরোহণের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলে স্যাটেলাইট প্রেরণ, চন্দ্রাভিযান প্রেরণ এর পাশাপাশি জ্ঞান চর্চায় পৃথিবীর সর্বোবৃহৎ লাইব্রেরি ‘শেখ মুহাম্মদ লাইব্রেরি’ স্থাপন করার পাশাপাশি দুবাই ফিউচার মিউজিয়াম স্থাপন করছে। যা জ্ঞান পিপাসু ও রহস্যপ্রিয় পর্যটকদের জ্ঞানক্ষুধা মিটানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মনে করেন দুবাইয়ের যুবরাজ প্রিন্স শেখ হামদান বিন মুহাম্মদ বিন রাশিদ।

পর্যটকদের কাছে রহস্যের অন্যতম বিষয় হলো অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যতে সম্পর্কে জানা। ঐতিহাসিকদের বিবরণ ও আলামত থেকে অতীত সম্পর্কে জানলেও, ভবিষ্যতে কি ঘটতে চলেছে বা ঘটবে বিজ্ঞান চর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে ভবিষ্যতের ধারণাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দুবাই ফিউচার মিউজিয়াম।

সবমিলিয়ে দুবাইয়ে গগনচুম্বী স্থাপনা, মরুর ধূসরতা ও রাতের চাকচিক্যতা দেশটিতে নিরাপদে পর্যটকদের বিচরণ পৃথিবীর মিলনস্থলকে জমজমাট করে তুলেছে। পর্যটকদের সরব অবস্থানের ফলে বিভিন্ন দেশের বণিকদের সাথে বাংলাদেশি বণিকরাও এখানে বাণিজ্যিক এক কর্মযজ্ঞ তৈরি করতে সফল হয়েছে। নববর্ষের আয়োজনকে ঘিরে দুবাইয়ে পর্যটকদের এমন পদচারণা ও উৎসবের আমেজ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন দেশটির বাসিন্দা ও পর্যটকরা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন