নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার দেওথান গ্রামের ভাটি বাংলার কিংবদন্তি যাত্রাশিল্পী গৌরাঙ্গ আদিত্য (৯৫) আর নেই।
দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ভুগছিলেন কিংবদন্তি এ শিল্পী। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে তিনি দেওথান গ্রামের নিজ বাড়িতে অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, ৪ মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত, শিষ্য ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মোহনগঞ্জ উপজেলার দেওথান গ্রামে ১৯৩৩ সালে গৌরাঙ্গ আদিত্য জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রমেশ চন্দ্র শীল এবং মা ঊষা রানী। মা-বাবা উভয়েই ছিলেন সংস্কৃতি অনুরাগী। বাবার কাছেই সঙ্গীতে হাতেখড়ি গৌরাঙ্গ আদিত্যের। পরবর্তীকালে ওস্তাদ বীরেন্দ্র চন্দ্র গোস্বামী, ওস্তাদ বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য এবং ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন।
কৃষ্ণলীলায় নদের নিমাই চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে যাত্রাজীবন শুরু হয় এ সঙ্গীত সাধকের। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে নবরঞ্জন অপেরা, বুলবুল অপেরা, গণেশ অপেরা, বাবুল অপেরা এবং বাংলাদেশে আবারও নবরঞ্জন অপেরা, চারণিক নাট্যগোষ্ঠী, কৃষ্ণকলি অপেরা, বঙ্গশ্রী অপেরা প্রভৃতি যাত্রাদলে শতাধিক যাত্রাপালায় বিবেকের অভিনয়ে জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে উঠেন গৌরাঙ্গ আদিত্য।
রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশারদ শৈলজারঞ্জন স্মৃতি পুরস্কার, নেত্রকোণার মহুয়া নাট্যগোষ্ঠীর সপ্তম নাট্যোৎসবে সংবর্ধনা, ময়মনসিংহের দৈনিক স্বদেশ ‘মুকুটহীন সম্রাট’ হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করে। শিল্প সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ বহু সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত বিবেক গানের আসরে ২০০৭ সালে তিনি সংবর্ধিত হন। বেসরকারি চ্যানেল আরটিভির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রশংসিত হন।
২০০০ সালে বিবিসির বাংলা বিভাগে তার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার হয়। ২০০১ সালে উদীচীর ময়মনসিংহ বিভাগীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী যাত্রা কর্মশালায় বিবেক গানের ছিলেন মুখ্য প্রশিক্ষক।
আনন্দাবাজার/কআ