কৃষকদের কৃষিঋণ পেতে নানা ধরনের ঝামেলায় পরতে হয়। দিতে হয় অতিরিক্ত অর্থও। এসব বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণের অতিরিক্ত সচিব বলাই কৃষ্ণ হাজরার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক আনন্দবাজারের বিশেষ প্রতিনিধি অশোক দত্ত।
প্রশ্ন: কৃষকের কৃষিঋণ প্রাপ্তিতে কি ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বা কি সহজ পদ্ধতি নেয়া হয়েছে?
সচিব: খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত ও সচল রাখতে নানান ধরনের প্রকল্প চালু আছে। এবারের কৃষিঋণ বিতরণের ব্যবস্থাপনাটি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলামের নতুন ভাবনা ও পরিকল্পনার অংশ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অনুশাসনও রয়েছে। এখন ঋণের জন্য কৃষককে আর ব্যাংকে যেতে হবে না। কর্মঘণ্টা নষ্ট করতে হবে না, মধ্যসত্ব বা দালাল ধরতে হবে না। অতিরিক্ত অর্থব্যয় করতে হবে না। এজন্য প্রতিটি জেলায় কৃষিঋণমেলা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আর এটি প্রথম চালু হয়েছে চুয়াডাঙ্গা থেকে। পদ্ধতিটি হলো সেখানে যেসব ব্যাংক আছে যারা কৃষিঋণ দেয় তাদের সঙ্গে কৃষকদের একটি যোগাযোগ করিয়ে দেয়া। মেলবন্ধন তৈরি করা। কৃষিতে কারা ঋণ পেতে পারে? তাদের কি কাগজপত্র প্রয়োজন তা জানানো হবে। কোন ফসলের জন্য কত টাকা ঋণ পাবে। এসব ঋণ কিভাবে ও কত টাকায় পরিশোধ করতে হবে তা জানানো হবে। আমাদের উপজেলা ও ব্লক পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছে তাদের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করা হবে। এরপরও যদি কোন কৃষক ভাবে যে তার ঋণ দরকার তখন সে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করবে। তারা যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিবে। আর কৃষিঋণ সবসময় হয় না। এটি নির্দিষ্ট সময় ও ফসলকে কেন্দ্র করে দেয়া হয়।
প্রশ্ন: কৃষক ঋণ আনতে যাবে না তাহলে পাবে কিভাবে?
সচিব: যাবে না বলতে কৃষককে ৫ বা ১০ দিন যেয়ে ফিরে আসতে হবে না। বসে থেকে প্রচুর সময় নষ্ট করতে হবে না। অর্থাৎ অল্প সময়ের পেয়ে যাবে। তাকে কোন ঝামেলায় পরতে হবে না। কৃষক সহজেই ঋণ পাবে ও অতিরিক্ত অর্থব্যয় করতে হবে না। সবকিছুই স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে। কৃষক সঠিক সময়ে উৎপাদন ব্যবস্থায় অর্থব্যয় করতে পারবে।
প্রশ্ন: বর্তমানে সারের মজুদ কত ও কৃষককে যথাসময়ে তারা কি সার পাবে?
সচিব: কৃষি উৎপাদনে রাসায়নিক সার বড় উপকরণ। এটি আমরা বছরের শুরুতে নিরুপণ করে থাকি। সেই চাহিদার আলোকে কখন কোন সার আসবে তার পরিকল্পনা করা থাকে। এমওপি সার রাশিয়া, বেলারুশ ও কানাডা থেকে আনা হয়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই পরিকল্পনায় ছেদ পড়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে। এমওপি সারের ৮০ ভাগ সারই আনা হয় রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। পরে আমরা কানাডা থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টনের স্থলে ৫ লাখ মেট্রিক টন সার আনছি। জাহাজিকরণে সমস্যা থাকলেও সেটি তারা সমাধান করে দিয়েছে। জানুয়ারিতেই আমরা সার পেয়ে যাবো। গতবছরের চেয়ে এবছর বেশি সার মজুদ আছে। কৃষকদের কোন চিন্তার কারণ নেই। কোন কালোবাজারি ও দালাল চক্রের খপ্পরে যাকে কৃষকরা না পরে। এজন্য জেলাপ্রশাসকদের সঙ্গে ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে মূলত ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি এবং এমওপি সার বেশি ব্যবহৃত হয়। দেশে প্রতি বছর সাড়ে ২৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে উৎপাদন হয় প্রায় ১০ লাখ টন ও বাকিটা আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং কাতার থেকে আমদানি করা হয়। টিএসপি সার প্রয়োজন হয় সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন হয় এক লাখ মেট্রিক টন ও বাকিটা মরক্কো, তিউনিশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। ডিএপি সারের প্রয়োজন হয় সাড়ে ১৬ লাখ। তার মধ্যে সাড়ে ১৫ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করা হয় চীন ও জর্ডান থেকেই। এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে আট লাখ, যার পুরোটাই বেলারুশ, রাশিয়া, কানাডা থেকে আমদানি করা হয়।
আনন্দবাজার/শহক