ঢাকা | মঙ্গলবার
২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কৃষিঋণ বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা

কৃষিঋণ বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা

কৃষিখাতে ঋণ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন গভর্ণর। গভর্নরের সভাপতিত্বে বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের খাদ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগামীতে কৃষি খাতে অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করতে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।

করোনার সময়ে ব্যাংকের সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখায় তিনি ব্যাংকের নির্বাহীদের সাধুবাদ জানান। এ সময় ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান এবং কৃষি ঋণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কৃষিখাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষকদেরকে স্বল্পতম সময়ে মৌসুমভিত্তিক ঋণ সুবিধা দেয়া হবে বলে গভর্নরকে আশ্বস্ত করেন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা।

এর আগে ১৭ নভেম্বর ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ নামে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে কৃষক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত এই তহবিলের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রয়োজনে তহবিলের অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদ বাড়ানো হবে।

মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় দেখা যায়, কৃষকের কৃষি ঋণ চাহিদাও আছে, বিতরণের লক্ষ্যমাত্রাও আছে, কিন্তু বিতরণে ঘাটতির কারণে কৃষককে যেতে হয় মহাজন কিংবা অন্য কোনো চড়া সুদে ‍ঋণ দেয়া প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে। অন্যথায় চাষের জমি বন্ধক কিংবা বিক্রি, ঠিকা পদ্ধতিতে কৃষককে জড়াতে হচ্ছে।

অধিকাংশ কৃষি ঋণ চলে যাচ্ছে অ-কৃষি খাতে। বিভিন্ন প্রকল্প ও বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহূত হচ্ছে এ ঋণের টাকা। এতে অনুসরণ করা হচ্ছে না ঋণ বিতরণ নীতিমালা। ফলে এ ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত কৃষক। শুধু তাই নয়, কৃষি ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না বেশির ভাগ অকৃষি খাতের উদ্যোক্তারা। এতে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সৃষ্টি হচ্ছে মূলধন ঘাটতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।

কৃষি ঋণ বিতরণের বর্তমান অবস্থা আর কিছুদিন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি কাঠামোয় কৃষি ঋণের গুরুত্ব অনেক বেশি। যে দেশের অধিকাংশ কৃষকের নিত্যদিন কাটে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সে দেশে সময়মতো প্রয়োজনীয় কৃষি ঋণ সহায়তা কৃষকের জন্য একান্তই প্রয়োজন।

তবে বাস্তবিক অর্থে কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে প্রয়োজনীয় কৃষি ঋণ সময়মতো পায় না বিধায় তাদের বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে করতে হয় ধার-দেনা। শুধু তাই নয়, অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলোর মধ্যে চাষের জমি বন্ধক, ঠিকা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করার ভবিষ্যৎ পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ ঠিকা পদ্ধতিতে ভবিষ্যতে বেশির ভাগ জমিই চলে যায় স্থায়ী কবলায়। বিপরীতে কৃষক তার প্রয়োজনীয় অর্থ সময়মতো ঋণ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে সরবরাহ পেতেন, তাহলে তাদের মহাজনি চড়া সুদে কিংবা চাষজমির বিনিময়ে অর্থ সংগ্রহ করতে হতো না।

সংবাদটি শেয়ার করুন