ঢাকা | মঙ্গলবার
২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধান কেনায় ‘কৃষকের অ্যাপ’

ধান কেনায় ‘কৃষকের অ্যাপ’

“নির্দেশনাসহ চিঠি ঢাকা, খুলনা, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রেরণ’

কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার সময় মধ্যসত্ত্বভোগী দালাল কিংবা কর্মকর্তাদের মধ্যে থাকা অসাধু ব্যক্তি যাতে অনিয়মের সুযোগ না পায় সেজন্য কম্পিউটার কাউন্সিল ‘কৃষকের অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে। কৃষকরা তাদের নিজেদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে এই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন। যাদের নাম অ্যাপে চলে আসবে তারাই আবেদনের সুযোগ পাবেন। আবেদনে তারা জানাবেন কোন জাতের ধান তিনি উৎপাদন করেছেন এবং কী পরিমাণ ধান বিক্রি করতে চান।

কৃষকের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণের পর সফটওয়্যারের মাধ্যমে লটারি করে চূড়ান্ত করা হবে কোন কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। একই সঙ্গে ডিজিটালি জানিয়ে দেয়া হবে তিনি কোথায় ধান বিক্রি করবেন এবং সেখানেই তাকে মূল্য পরিশোধে একটি চেকের প্রিন্ট কপি দেয়া হবে যা তিনি ব্যাংকে দেখিয়ে টাকা তুলতে পারবেন।

বছর দুয়েক আগে থেকেই অ্যাপটি ব্যবহারের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তারা ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। খাদ্য বিভাগের জেলা ও থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রগুলো সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে অ্যাপটি ব্যবহার সম্পর্কে। কারও কাছে ফোন না থাকলেও বেশ কয়েকটি জায়গায় গিয়ে তারা নাম নিবন্ধন ও আবেদন করতে পারবেন। আর নিবন্ধন একজনের জন্য একবারই চূড়ান্ত। ওই নিবন্ধন নাম্বার দিয়েই তিনি প্রতিবছর ধান বিক্রয়সহ বেশ কিছু কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন।

কৃষকের অ্যাপের যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি যে কেউ ডাউনলোড করতে পারবেন। এটি ব্যবহার করে কোনো ঝামেলা ছাড়াই কৃষক তার উৎপাদিত ধান ও চাল সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। মিল মালিক ও কৃষক মোবাইলে ধান চালের চাহিদা, সরবরাহের তারিখ বার্তার মাধ্যমে জেনে যাবেন। ধান বিক্রয়ের আবেদন ও আবেদনের অবস্থা দেখা যাবে। কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করতে পারবেন।

২৭২ উপজেলায় ধান কেনা

এবার দেশব্যাপী ২৭২টি নির্বাচিত উপজেলায় ‘কৃষকের অ্যাপ’ পাইলট আকারে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব উপজেলায় কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনাসহ এ বিষয়ের প্রচারণায় ১৩ নির্দেশনা দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। এসব নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি সম্প্রতি ঢাকা, খুলনা, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রককে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, আমন ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশব্যাপী ২৭২টি নির্বাচিত উপজেলায় ‘কৃষকের অ্যাপ’ পাইলট আকারে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে কৃষক নিবন্ধন ও ধান বিক্রির আবেদনের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। ‘কৃষকের অ্যাপ’ এর মাধ্যমে কৃষক নিবন্ধন ও ধান বিক্রির আবেদন ও নিবন্ধনের সময়সীমা সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে বহুল প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য নিচের নির্দেশনা প্রদান করা হলো—

১. নির্বাচিত উপজেলাগুলোতে ‘কৃষকের অ্যাপ’ এর মাধ্যমে ধান ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে।

২. প্রশিক্ষণ সিডিউল অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব ইউএনও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ খাদ্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট মনোনীত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জুমের মাধ্যমে ভার্চুয়াল কর্মশালায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

৩. খাদ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট www.dgfood.gov.bd নিচের অংশে সংযোজিত ‘ফটো এবং ভিডিও বক্স’ থেকে ‘গাইড লাইন – কৃষকের অ্যাপ’ থেকে ভিডিও টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করে অ্যাপ ব্যবহার সম্পর্কে ইউএনও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করতে হবে।

৪. ওয়েবসাইটের উল্লেখিত বক্স থেকে কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত করা লিফলেট (সংযুক্ত লিফলেট) ও তৈরি করা অডিও ডাউনলোড করে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সব ইউনিয়নে প্রচার করতে হবে।

৫. ওয়েবসাইটের উল্লেখিত বক্স থেকে প্রস্তুত করা পোস্টার (লিফলেট) উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থান, বাজার, মসজিদের প্রধান ফটকের বিপরীতে এবং দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে সেঁটে দিতে হবে।

৬. প্রস্তুত করা লিফলেট জনসমাগম স্থানে যেমন— মসজিদ মন্দির, স্থানীয় বাজারের দিন, চায়ের দোকানে বিতরণ করতে হবে।

৭. প্রস্তুত করা লিফলেট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

৮. উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার উঠান বৈঠকে উপস্থিত হয়ে প্রস্তুত করা লিফলেট বিতরণ করতে হবে।

৯. কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের জন্য তৈরি করা অডিও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসমাগম স্থানে প্রচার করা করতে হবে।

১০. প্রস্তুত করা লিফলেট জেলা/উপজেলার ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টার/লিফলেট প্রকাশ করে প্রচার করতে হবে।

১২. স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সভা করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার, মহিলা মেম্বার, ইউডিসি উদ্যোক্তাদের অবহিত করতে হবে।

১৩. ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তার মাধ্যমে কৃষক নিবন্ধন উৎসাহিত করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন