ঢাকা | শনিবার
৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে উৎপাদন

কৃষিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে উৎপাদন

বাংলাদেশ ব্যাংকে মূলধন বা রির্জাভ সংকট থাকার কারণে ব্যবসায়-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানিসহ বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। কমছে উৎপাদন। শিল্প-কারখানার মালিকরা জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টসহ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করছেন। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ছাড়া এলসিও খোলা যাচ্ছে না। আবার বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় কৃষিজ উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ যথাযথ ঋণ নেই কৃষিতে। এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদের মুখোমুখি হয় দৈনিক আনন্দবাজার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক আহমাদ আরিফ।

যেসব ব্যাংকে লাইন অব ক্রেডিড-এলসি খোলার মতো পর্যাপ্ত মূলধন (রিজার্ভ) নেই তারা অন্য ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে এলসি খুলতে পারবে কিনা বা বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাপারে নতুন কিছু চিন্তা করছে কিনা প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনা পরবর্তী ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বহির্বিশ্বে সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এই সংকটে বিশ্বের সবখাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমরাও এর বাইরে নই। সেই আঘাত আমাদের অর্থনীতিতেও ধাক্কা দিয়েছে। এক্সটার্নাল সাইটে ডলারের যে সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে বিভিন্ন নীতি-সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক একটি বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে। এখন আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানির ব্যাপারে শুধু এলসি খোলার অনুমতি দিচ্ছি। এরই মধ্যে রেমিটেন্স আনার ক্ষেত্রে সহজিকরণ কিছু নীতি-সহায়তা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে যারা রেমিটেন্স পাঠাবে তাদের চার্জ নেয়া হচ্ছে না। তথা চার্জ শূন্য করা হয়েছে। আর আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ের দিকে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করে দর নির্ণয় করা হচ্ছে। সেখানেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথেষ্ট ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আছে। ফরেস্ট মার্কেটের রেটের বিষয়ে একটি বিশেষ টিম কাজ করছে। এটিকে একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতেই এই কার্যক্রম। আশা করা যায় অতিদ্রুত  সময়ের মধ্যে একটি রেটেই লেনদেন কাজ করবে।

কয়েক মাস যাবত প্রধানমন্ত্রী কৃষি তথা কৃষিজ উৎপাদনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তরুণদের কৃষিতে মনযোগ দিতে বলছেন কিন্তু ঋণ তো নেই এখাতে এ প্রশ্নের জবাবে এ কে আজাদ বলেন, বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বার বার উল্লেখ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে আমরা কয়েকটি ক্রেডিড লাইনে কৃষি ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৬ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার একটি ক্রেডিড লাইন এক্সটেনশন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অচিরেই এই ক্রেডিড লাইন ও তার ডিসপারেট সম্পর্কে জানা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও কৃষিজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছে। কিভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারেও কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।

দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ ভাগই কৃষিতে। অথচ এখানে ঋণ দেয়া হয় খুবই কম কেন? প্রশ্নের জবাবে এ কে আজাদ বলেন, বাংলাদেশে ডাইভারসিটিফিকেশন যেটা হয়েছে তা হচ্ছে শিল্পে। কৃষির একটি অংশ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। শিল্পের যে নীতি, কৃষি ও ক্ষুদ্রশিল্পের যে ঋণের টার্গেট তা ভিন্ন ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন টার্গেট নিয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের ত্রৈ-মাসিকে কৃষির ৮ দশমিক ৩৩ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতিমধ্যে কৃষিঋণ ২৫ শতাংশ ডিসভার্সেস হয়েছে। আমরা আশাবাদী কৃষিতে উৎপাদন সচল হবে। এতে লক্ষ্যমাত্রর চেয়েও বেশি উৎপাদন হবে।

সাধারণত দেশে যে কৃষিঋণ দেয়া হয় তা এগ্রোফার্মগুলো পায়। সেখানে সাধারণ কৃষকদের জন্য কি পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক? এ সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, এই বিষয়ে কৃষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচির তথ্য যাচাই করলে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ, পল্লি এলাকায় ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ, খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার ও গ্রামীণ দারিদ্র মোচনে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণের কর্মসূচি নেয়া হয়। এই সময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ২টি, ৪০টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৮টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ২৮ হাজার ৮৩৪ দশমিক ২১ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণ করেছে। এটি মোট লক্ষ্যমাত্রার ১০১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার ৩২২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ১৩ দশমিক ০৩ শতাংশ বেশি। এছাড়াও বিআরডিবি ২০২১-২২ অর্থবছরে এক হাজার ১১৯ দশমিক ১৭ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণ করেছে।

আবুল কালাম আজাদ জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮১১ জন কৃষি ও পল্লিঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিঙকেজের মাধ্যমে ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫২ জন নারী বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১০ হাজার ৮২৯ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এ সময়ে ২১ হাজার ৮৫৮টি প্রকাশ্য ঋণ বিতরণ কর্মসূচির মাধ্যমে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৩৯ জন কৃষকের মাঝে ব্যাংকগুলো ৮৪৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। একই সময়ে ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৪৫ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০ হাজার ১৮২ দশমিক ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া চর, হাওর, প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৪ হাজার ৭৩ জন কৃষকের মাঝে বিভিন্ন ব্যাংক ১৯ দশমিক ৫৯ কোটি কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণ করেছে। আর চলতি বছরের মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী কৃষকদের জন্য রাষ্ট্র মালিকানাধীন ও তফসিলি ব্যাংকগুলোতে ১০ টাকা জমা গ্রহণপূর্বক খোলা ৯৯ লাখ ৩ হাজার ২৩৩টি ব্যাংক একাউন্ট চালু আছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন