ঢাকা | শনিবার
১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈশ্বিক খাদ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে উদ্বেগ

বৈশ্বিক খাদ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে উদ্বেগ

খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি সক্রিয় রাখতে মরিয়া তুরস্ক

  • জাতিসংঘের কাছে ‘গ্যারান্টি’ চায় রাশিয়া

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট কমাতে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সম্প্রতি ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান জাহাজে ড্রোন হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে চুক্তিটি স্থগিত করে রাশিয়া। যে কারণে গত রবিবার থেকে ইউক্রেনের সমুদ্রসীমা থেকে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিশ্ব আরও চরম খাদ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। তবে রাশিয়া-ইউক্রেনের খাদ্যশস্য চুক্তি অব্যাহত রাখতে তুরস্ক বদ্ধপরিকর। গত সোমবার ইস্তাম্বুলে এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ান। অপরদিকে ইউক্রেনের দিক থেকে খাদ্যশস্য করিডোর নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে জাতিসংঘের ‘গ্যারান্টি’ চায় রাশিয়া।

কৃষ্ণসাগরের ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার পর ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানির চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। চুক্তির ফলে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে শস্য রপ্তানি ফের চালু করেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। গত ২২ জুলাই ইস্তাম্বুলে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সই হয় বহুল প্রত্যাশিত সেই চুক্তি।

তবে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, মস্কো চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া সত্ত্বেও এ উদ্যোগ টিকিয়ে রাখতে আঙ্কারা বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, যদিও রাশিয়া এ বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত, কেননা তাদের জন্য একই সুবিধা দেওয়া হয় না। তবে আমরা মানবতার কল্যাণে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকর সোমবার রুশ প্রতিপক্ষ সের্গেই শোইগুকে বলেছেন যে মস্কোর উচিত তার অংশগ্রহণ স্থগিত করার বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা। তাদের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয় বিষয়টি নিয়ে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শোইগুকে বলেন যে শস্য চুক্তিটি চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটিকে ইউক্রেনের সংঘাত থেকে আলাদাভাবে দেখা উচিত। এই কর্মসূচির সমন্বয়কারী জাতিসংঘের কর্মকর্তা আমির আবদুল্লাহ বলেছেন, বেসামরিক পণ্যবাহী জাহাজ কখনই সামরিক লক্ষ্য বা জিম্মি হতে পারে না। খাদ্যশস্য অবশ্যই রপ্তানি হবে।

হামলা নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে যে, ইউক্রেন শনিবার ভোররাতে ১৬ টি ড্রোন দিয়ে সংযুক্ত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সেভাস্তোপোল বন্দর ব্যবহার করে তাদের নৌবহরে হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‘বিশেষজ্ঞরা’ ‘সন্ত্রাসী’ হামলার সমন্বয় করতে সহায়তা করে বলেও অভিযোগ রাশিয়ার। তবে লন্ডন মস্কোর দাবিকে অকপটে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে, ইউক্রেনের দিক থেকে খাদ্যশস্য করিডোর নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে জাতিসংঘের ‘গ্যারান্টি’ চায় রাশিয়া। গত সোমবার মস্কোর তরফে এমন দাবি তোলা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। রাশিয়া বলছে, জাতিসংঘ যেন তাদের এটা নিশ্চিত করে যে, কৃষিপণ্য রফতানির মানবিক করিডোর ব্যবহার করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবে না ইউক্রেন।

মেসেজিং অ্যাপে টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেন এই রুটটি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করার বাড়তি প্রতিশ্রুতি না দেওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলে কোনও কিছুর সুরক্ষার গ্যারান্টি দেওয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে না।

বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ সহজ করার উদ্দেশে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। এর আওতায় নিজ দেশের কৃষ্ণ সাগর উপকূলের বন্দর দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে খাদ্যদ্রব্য রফতানির সুযোগ পায় ইউক্রেনে। এখন এই চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার ঘটনাকে বিশ্বে খাদ্যশস্য সরবরাহ নিশ্চিতের পথে বড় ধরনের একটি আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই চুক্তির আওতায় এরইমধ্যে ৯০ লাখ টনেরও বেশি ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানি করার অনুমোদন হয় এবং আগামী ১৯ নভেম্বর চুক্তিটি নবায়ন করার কথা আছে। ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কার্যত বন্ধ থাকে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো। শুধু ওডেসা বন্দরেই আটকা পড়ে ২৫ মিলিয়ন টন শস্য। চুক্তি সইয়ের ফলে রাশিয়ার খাদ্যপণ্যসহ সারও রপ্তানি শুরু হয় এই সমুদ্রপথে।

বিশ্বে খাদ্যের ১০ ভাগের এক ভাগ সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। বৈশ্বিক গম রপ্তানির ৩০ শতাংশের পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে তারা। কমপক্ষে ২৬টি দেশ তাদের অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যশস্যের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল।

সংবাদটি শেয়ার করুন