১৮৫৮ সাল থেকে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুলের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ১৫৩ বছরের বিবর্তনের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাফল্যের সাক্ষী হয়ে ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তখন থেকেই ২০ অক্টোবরকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, অতীতের আঁধার কাটিয়ে নতুন ভোরের প্রত্যাশায় প্রাপ্তির ১৭তম বছরে পদার্পণ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রয়াত জগন্নাথ রায় চৌধুরী ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। পড়াশোনার সুখ্যাতি ও প্রসারে অনুপ্রাণিত হয়ে জগন্নাথ রায় চৌধুরীর ছেলে কিশোরী লাল রায় চৌধুরী ১৮৮৪ সালে এটিকে কলেজে উন্নীত করেন। তখন এর নাম বদলে করা হয় ঢাকা জগন্নাথ কলেজ। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৭ সালে শিক্ষা বিভাগের নির্দেশে স্কুল ও কলেজ শাখা আলাদা হয়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কলেজটিতে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। তখন এর নাম ছিল ‘জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ’। এর ২৮ বছর পর ১৯৪৯ সালে এই কলেজে আবার স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে জগন্নাথ কলেজ সরকারি করা হয়। ১৯৭৫ সালে এতে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। বর্তমানে ২টি ইনস্টিটিউট ও ৬টি অনুষদ নিয়ে মোট ৩৬ বিভাগে সেমিস্টার অনুযায়ী কোর্স সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রায় ২০ হাজারের অধিক স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সময়ের ধারায় জগু বাবুর পাঠশালা এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রত্যাশা, অর্জন, সাফল্যের কোনো কমতি নেই; শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষকদের সমন্বয়ে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও আছে নানা অর্জন। প্রতি বছর একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র-শিক্ষক উন্নত দেশে যাচ্ছেন উচ্চশিক্ষার জন্য এবং অনেকেই ফিরে এসে জ্ঞানের আলোয় রাঙিয়ে তুলছেন প্রাণের এই ক্যাম্পাস। হাজারো স্বপ্নবাজ-অদম্য তরুণ-তরুণীর প্রাণের স্পন্দন লাল বাসের-লালচে প্রাচীরের এই ক্যাম্পাস।
অর্জন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৭তম বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি মেডিকেল কাউন্সিলিংয়ের উদ্বোধন করা হয়। সকলেই সন্তোষজনক সেবা পেয়ে যাচ্ছেন দক্ষ কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত এই কাউন্সিলিং সেন্টার থেকে। স্পেনের সিমাগো ইন্সটিটিউশনের মানদণ্ডে গবেষণা সূচকে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ। ইউজিসির বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (২০২১-২০২২) অর্থবছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোর সাথে একাধিক গবেষণা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কার্যক্রম যথেষ্ট সন্তুষ্টজনক হওয়ায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই।
প্রত্যাশা ও অর্জন
ছাত্র শিক্ষকদের আন্তরিক মিলনে সর্বদা বিরাজ করে এক শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয় যে সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার এক অনন্য জায়গা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তার প্রমাণ দিয়েছেন। এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে মোট পাচঁজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাসে মুক্ত কোনো মাঠ না থাকলেও দাবা, ভলিভল, টেবিল টেনিসসহ ঘরোয়া বিভিন্ন খেলায় ছেলে- মেয়েদের গৌরবময় অর্জন আমাদের আরও স্বপ্নবাজ হতে শেখায়। জ্ঞানগরিমার প্রতিযোগিতায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে অনন্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাফল্য ও অর্জনের আড়ালেও আছে সুপ্ত কিছু দাবি যার এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসে নি সমাধান! বিশ্ববিদ্যালয়ের অবাধ চর্চায় হলগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। নতুন ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তিনবছরে নির্মাণ হয়নি প্রাচীর। নেই ছেলেদের জন্য কোনো আবাসন ব্যবস্থা, হল, উন্মুক্ত মাঠ, উপযুক্ত লাইব্রেরি, নিরাপদ গাড়ি পার্কিংসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অবকাঠামোগত যত সুযোগ-সুবিধা থাকার প্রয়োজন তার অনেকাংশই নেই। এগুলো থাকলে হয়তো শিক্ষার্থীদের অর্জন অনেকটাই বিস্ময়কর হতো।
সংগ্রামী জীবনে হারে হারে উপলব্ধি করে জীবন যুদ্ধেও সবার চেয়ে এগিয়ে জবিয়ানরা। দেশের সরকারি- বেসরকারি, ব্যাংক, করপোরেটসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেদের ক্যারিয়ারকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিতে সফল হয়েছেন অনেকেই। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সংগঠনগুলো যেমন সাংবাদিক সমিতি, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ফিল্ম সোসাইটি, ডিবেটিং সোসাইটি, প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটসহ প্রায় কুড়িখানেক সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়কে এক কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করেছে।