- জাল ভোট দেয়ায় মামলা, গ্রেপ্তার ১
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফুলছড়ি। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলায় বিক্ষোভ ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে ফুলছড়ি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ঘটনার পর রাতেই জাল ভোট দেয়ার অপরাধে সুজন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম সেলিম পারভেজের নেতৃত্বে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। তারা উপজেলা কার্যালয়ের প্রধান সড়কে বসে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের আগে বিশাল মিছিল উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে সড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
এসময় বক্তব্য রাখেন ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন, ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল হান্নান, গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান খুশু, কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল পারভেজ শালু, ফুলছড়ি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এটিএম রাশেদুজ্জামান রোকন, আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলামসহ আরো অন্যরা।
বক্তারা বলেন, যে কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে সেসব কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হোক। এছাড়া স্থগিত করা কেন্দ্রের ভোট গ্রহণের তারিখ পরে ঘোষণা করা হোক। সেইসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওছার আলী জানান, বর্তমানে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ ছেড়ে দিয়েছেন। এই ইস্যুতে বড় ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে নজরদারি রাখা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আওয়ামী লীগ ব্যতিত জাতীয় পার্টির এএইচএম গোলাম শহীদ রনজু (লাঙল), বিকল্পধারা জাহাঙ্গীর আলম (কুলা), স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) ও স্বতন্ত্র সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (ট্রাক) ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোট গ্রহণ পরিস্থিতি দেখে ওই চার প্রার্থী সাঘাটা উপজেলার বগারভিটা স্কুল ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের কাছে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
ভোট বর্জনকারি জাতীয় পাটির সমর্থিত প্রার্থী ও জাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এএইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু সাঘাটা উপজেলার বগারভিটা স্কুল কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থী ছাড়া অপর ৪ প্রার্থী একত্রিত হয়ে সংবাদকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেয়া, ইভিএমএ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
গাইবান্ধা জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান খান আবু জানান, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। আওয়ামীলীগ ও তাদের নেতাকর্মীরা সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে কেন্দ্র তাদের দখলে নেয়। এছাড়া ভোটকেন্দ্র থেকে জাতীয় পার্টির এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের গাফলতির কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই সুযোগ নিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ঘটনার জন্য নির্বাচন কর্মকর্তারাও দায়ি বলে মন্তব্য করেন।
এদিকে গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালিব জানান, গত ১২ অক্টোবরে গাইবান্ধা ৫ আসনে ভোট জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনে অনিয়মের কারণে প্রিজাইডিং অফিসার মাজেদুল ইসলাম বাদী হয়ে সাঘাটা থানায় সুজন নামের এব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দাযের করা হয় পরে করা হয়।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, নির্বাচনে অনিয়মের কারণে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
আনন্দবাজার/শহক