গাজীপুরের কালীগঞ্জে সবুজ মাল্টা চাষে ব্যপক ফলন হওয়ায় চাষিদের চোখে এখন রঙিন স্বপ্ন। এতে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন মাল্টা চাষিরা। সবুজ রঙের এ মাল্টা স্থানীয় বাজারসহ বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে মাল্টা চাষে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে সব ধরণের সহযোগীতা।
স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলায় ২০২১/২২ অর্থ বছরে প্রায় ১৩ একর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। তাতে ফলন হয়েছে ৮০ মেট্রিকটন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের মধ্যে মাল্টার চারা, প্রয়োজনীয় সার, গভীর নলকুপ, পরিচর্যা সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। তাই বিগত বছরের তুলনায় এবার মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের শুরুর দিকে মাল্টা পরিপক্ক হয়। তাই এ সময়টাই ফল সংগ্রহে চাষিদের বাগানে ধুম পড়ে। তাছাড়া বাজারে মাল্টার দাম ও চাহিদা দুটোই ভালো।
কৃষি অধিদপ্তর আরো জানায়, উপজেলার বক্তারপুর, জাঙ্গালীয়া, মোক্তারপুর ও নাগরী ইউনিয়নের মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি হেক্টর জমিতে সোয়া ৬ টন মাল্টা উৎপাদন হয়। একবার মাল্টা বাগান করলে ২০ বছর পর্যন্ত টানা ফল পাওয়া যায়। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা।
উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের পৈলানপুর গ্রামের মৃত কাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে মাল্টা চাষি কাজী মোহাম্মদ ইমতিয়াজ সুজন (৪৫) জানান, গেল বছর তিনি ২০ শতক জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর তার মাল্টা বাগানে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুন ফলন হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারের মাল্টারও বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়ভাবে মাল্টা বাগানের খুব চাহিদা থাকায় মাঠ পর্যায়ের কৃষকদেরকে মাল্টা চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাল্টা চারা, সারসহ অন্যান্য উপাদান সরবরাহ করা হয়।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, উপজেলায় এবার মাল্টা চাষ ব্যাপকভাবে হয়েছে। আর আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় ফলনও হয়েছে ব্যাপকভাবে। আশা করছি গেল বছরের তুলনায় এ বছর মাল্টার ফলন দ্বিগুণ হবে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিটি চাষিকে বাগানে বাগানে গিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে কৃষকরা খুব লাভবান বলেও তিনি আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, মাল্টা বিদেশী ফল হলেও বর্তমানে বিভিন্ন গবেষনার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কিছু নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। যা আমাদের দেশের মাটিতেও ভালো ফলন দিচ্ছে এবং খুব সহজেই তা চাষাবাদ করতে পারছি। আমাদের লেবু জাতীয় ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা লেবু, মাল্টা, কমলা ও বাতাবি লেবুর প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছি। কৃষকদেরকে আমরা বিনামূল্যে উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করছি। পাশাপাশি সার ও বাগান পরিচর্যার জন্য পরিচর্যা সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।