কুমিল্লার দাউদকান্দিতে নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। এলাকায় মাছ চাষের নতুন এ পদ্ধতি দেখে স্থানীয় বেকার যুবক ও ভূমিহীন মৎস্যজীবীরা নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
দাউদকান্দি উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সৈয়দখার কান্দিতে, ধনাগোধা নদীর পাড় ঘেঁষে ৪০টি খাঁচায় মাছ চাষ করেছেন মো. হানিফ তালুকদার। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, উপজেলার সৈয়দখারকান্দি, গোয়ালমারী, চেঙ্গাকান্দি, ফতেরকান্দি গ্রামের মৎস্যজীবীদেরকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে স্থানীয় লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে ২০ জন করে দল গঠন করে দেওয়া হয়। ২০জন চাষিদের নিয়ে ১০টি খাঁচায় মাছ চাষের জন্য একটি দল গঠন করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দুই লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। ওইসব খাঁচাতে ‘মনোসেক্স’ জাতের তেলাপিয়া মাছের পোনা, পাঙ্গাস, গ্লাসকার্প মাছ ছাড়া হয়। পরবর্তী সময়ে খাঁচায় নদীতে মাছ চাষের নতুন পদ্ধতি লাভবান হয়ে তারা ব্যক্তিগতভাবে খাচার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। তাদের অনুসরণে বেকার যুবকরা নিজস্ব উদ্যোগে নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করতে শুরু করে। পোনা ছাড়ার দুই-তিন মাস পর মাছের ওজন ও মাছে কোনো রোগ-বালাই দেখা না দেওয়ায় প্রতিটি খাঁচায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন চাষিরা।
চাষে হানিফ তালুকদার জানান, বিদেশ থেকে দেশে ফিরে বেকার ছিলাম। কর্মসংস্থানের উদ্দ্যেশ্যে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিসে যাই পরামর্শের জন্য। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের জন্য ২০ জনের একটি দল গঠন করার পরামর্শ দেন। দল গঠন করার পর তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর প্রথমে ১০টি খাঁচা তৈরি ও মাছের পোনা ছাড়ার জন্য দুই লাখ টাকা সরকারি অনুদানও দেওয়া হয়। অনুদানের টাকায় ড্রাম, নেট ও বাঁশ দিয়ে সৈয়দখার কান্দিতে ধনাগোধা নদের উপর ১০টি খাঁচা তৈরি করি।
মাষ চাষে সফলতা দেখে পরবর্তীতে আরো ১০টি খাঁচা দেয়া হলে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে ২০টি খাঁচা তৈরি করে মোট ৪০টি খাঁচায় এখন মাছ চাষ করছি। এক মাস পর মাছ বিক্রি করবো। ৪০টি খাচায় আমার প্রায় মাছ, খাবার ও অন্যান্য ব্যয় ১৪ লাখ টাকা। মাছ বিক্রির পর ভালো মুনাফা অর্জন হবে। চাষের মাছের তুলনায় এখানকার মাছের স্বাদ বেশি হওয়ায় বাজারে এ মাছের অনেক চাহিদা। হানিফ তালুকদার আরও বলেন, ‘স্বল্প পুঁজি নিয়েই এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। ২০ বাই ১০ ফিটের প্রতিটি খাঁচা তৈরি করতে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর টাকা খরচ হবে মাছের পোনা ও মাছের খাবার বাবদ। এর জন্য নিজস্ব কোনো জলাভূমির প্রয়োজন নেই। যে কেউ এ পদ্ধতি নদীতে মাছ চাষ করতে পারেন।