ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বছর জুড়ে দরপতনে হাহাকার

ক্ষমতায় আসার পর সরকারের প্রথম বছর ২০১৯ সাল ‘পুঁজিবাজার ভালো থাকবে’ এমন আশাই ছিলো বিনিয়োগকারীদের মনে। ধসের আট বছর পর ব্রোকারেজ হাউসগুলো আবারও ব্যবসায় ফিরবে। পুঁজিবাজারে ফিরবে প্রাণ। বিনিয়োগকারীরাও তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পাবে। শেয়ার ব্যবসার পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং এবং মতিঝিলের এলাকার হোটেলসহ সব ধরনের ব্যবসা আবার হবে জমজমাট। 

প্রত্যাশা অনুসারে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন করে। কিন্তু জানুয়ারির ২৭ তারিখ থেকে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশায় ছাই পড়া শুরু হয়। সূচক পতন শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। তার সঙ্গে যোগ হয় দুর্বল কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজার থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ। উৎপাদনহীন তার ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বৃদ্ধি ‘জেড’ ক্যাটাগরির এমন কয়েকটি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। পুঁজিবাজারের উপর পড়ে এর নেতিবাচক প্রভাব। ডিএসইর ওপর বাড়তে থাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপ।

এরমধ্যে বেরিয়ে আসে কোম্পানিগুলোর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের অনৈতিক প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের খবর। নতুন করে যোগ হয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আসা বিনিয়োগকারীদের টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক করবে এনবিআর। কিন্তু এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, “বিনিয়োগকারীদের জন্য টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক নয়”।

এভাবেই টানা তিন মাস কেটে যায় । দরপতন চলতে থাকে টানা এই সময় জুড়েই। দরপতনে নতুন করে পুঁজি উধাও হয় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এরকম পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের আশা দিলেও পরিবর্তে ২২ এপ্রিল জানান, ‘পুঁজিবাজারের অবস্থাকে আমি খারাপ বলবো না। এটা ঠিকই আছে। পুঁজিবাজারে এখন কোনো সমস্যা নেই। আমি তো দেখলাম পুঁজিবাজারের অবস্থা ঠিকই আছে।’

অর্থমন্ত্রী আরো জানান, “পুঁজিবাজারে কাউকে জোর করে আনতে পারবেন না। কেউ আসতে চাইলে আসবে। না আসলে নেই। মার্কেট খারাপ আমরা দেখি না। এখানে মার্কেট চলে আপনাদের দ্বারা। আপনারাই চালাচ্ছেন। আপনারা যেভাবে চালান মনে হয় যেনো বাজারই নেই”।

এগুলো শেষ হতে না হতেই ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা হয়। অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের আশা দেন যে, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হবে। বাজেট ঘোষণা হয় এবং সেখানে বেশ কিছু প্রণোদনাও দেওয়া হয়। তবে বাজেটে কোনো কোম্পানি বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিলে কোম্পানিগুলোকে ১৫ শতাংশ কর প্রদান করতে হবে এমন প্রস্তাব দেওয়া হলে আবারও শুরু হয় দরপতন।

এই বিষয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, পুঁজিবাজার সিংহ ও ছাগলের বাজার। এখানে বড় বিনিয়োগকারীদের সিংহ এবং ছোট বিনিয়োগকারীদের ছাগলের সঙ্গে তুলনা করে তিনি আরো বলেন, এই বাজারে ৫০ কোটি নয় আরও ৫ লাখ কোটি টাকা দিলেও খেয়ে ফেলবে। এখানে ৫-১০ লাখ কোটি টাকা দিয়ে কোনো লাভ নেই। অর্থমন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্যের পর দরপতন আবার শুরু হয়।

এভাবেই ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারির পর থেকেই দরপতন চলছে। এই পতনের ফলে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৬ লাখ বিনিয়োগকারীর ৮৩ হাজার কোটি টাকা পুঁজি উধাও হয়ে গেছে। ২০১০ সালের চেয়ে বড় ধসে রূপ নিয়েছে এই ১১ মাসের দরপতন। এখন বিনিয়োগকারীদের আশা কোনো রকম পুঁজি নিয়ে পুঁজিবাজার ছাড়তে চায়।

আনন্দবাজার/ফাহিম

সংবাদটি শেয়ার করুন