বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশেও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব

চলতি অর্থবছরে ২০০৯ সালের পর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম হবে। এই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। আবার গত ছয় মাসে বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে । বিশ্ব অর্থনীতির এমন দুরবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে দ্য অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশনের (ওইসিডি) এক প্রতিবেদনে। এমনকি বিশ্ব অর্থনৈতিক এই মন্দার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।

একমাত্র প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় সকল সূচকই নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য। দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা আরো বেড়ে চলছে। তবে এতদিন আমদানি বাড়ার প্রবণতা ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের হিসাবে দেখা গেছে, আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ কমে গেছে। সার্বিক আমদানির পাশাপাশি শিল্প খাতে বিকাশের প্রধান উপকরণ মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিও অনেক কমে গেছে।

অপরদিকে রপ্তানি বাণিজ্যেও চলছে মন্দা। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৮০৫ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ডলারের পণ্য। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৭০৭ কোটি ডলারের পণ্য।

রপ্তানি আয় এবং আমদানি কমে যাওয়ায় বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৬২ কোটি ডলার।

আরও পড়ুনঃ  বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়াল

অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট, আমদানি এবং রপ্তানির ঋণাত্মক অবস্থার কারণে অর্জিত হচ্ছে না শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ হয়েছে মাত্র ৬৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা কম। কিন্তু গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশের উৎপাদনশীল খাত অথবা শিল্প খাতের উত্পাদন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী, তার পরিমাপ করা হয় সেদেশের মোট দেশজ উত্পাদন অথবা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবে। সেই বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি বর্তমানে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরেও ৮ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছে সরকার। ফলে যেসব সূচকের ওপর ভর করে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে, তাদের বেশির ভাগই এখন নিম্নমুখী।

এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, ‘আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক যেভাবে নিম্নমুখী হচ্ছে, তাতে প্রবৃদ্ধি অনেক কম হবে বলেই মনে হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার বিভিন্ন প্রভাব ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে।’ ভবিষ্যতে এটা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  রেফ্রিজারেটর উৎপাদনখাতে সুবাতাস

আনন্দবাজার/এফআইবি

সংবাদটি শেয়ার করুন