সালাউদ্দিন হাসিখুশি শান্ত-শিষ্ট স্বভাবের তরুণ। আগ্রহ ও সৃজনশীল কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে যুক্ত হয়েছে সাংবাদিকতা পেশায়। বর্তমানে কাজ করছেন অর্থনীতিভিত্তিক পত্রিকা ‘দৈনিক আনন্দবাজারে’। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর-২০২২) পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্যাতিত ও আহত হয়েছে বিএনপির মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার নেতাকর্মীদের হাতে। এদিন সারাদেশে খুন, গুম ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদের বিক্ষোভ মিছিল করছিল স্থানীয় সংগঠনটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন।
সালাউদ্দিনের ভাষায়, কুলাউড়া উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খুন, গুমের প্রতিবাদের বিক্ষোভ মিছিল করছিল। বিকালে এক পর্যায়ে তারা সেখানকার রেল স্টেশনের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখছিল। এমন সময় একটি রেল আসায় তারা সেটিকে অবরোধ করতে শুরু করে। তখন রেলওয়ে পুলিশ তাদের তাদেরকে বাধা দেয়। এ অবস্থায় তারা রেলওয়ে পুলিশদের ধাওয়া দিয়ে থানার ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দেয়। আমি সেই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকি। তখন কয়েকজন আমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি সাংবাদিক পরিচয় দেই। তখন সেখানকার নেতাকর্মীরা আমার ওপর চড়াও হয়। তারা মোবাইল ছিনিয়ে নিতে ধস্তাদস্তি শুরু করে। পরে এক পর্যায়ে তা নিতে না পেরে আমার গালে আঘাত করে, গালমন্দ করে। তাদের আঘাতে আহত হলে স্থানীয় সাংবাদিকরা আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে।
পরে কুলাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এ নিয়ে কঠিন পদক্ষেপ নিলে চাইলে বিএনপির স্থানীয় নেতারা ক্ষমা চায় ও আগামীতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাবে না বলে আশ^াস দেয়। তখন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেন।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেল প্রেসক্লাবের সভাপতি এম শাকিল রশিদ চৌধুরী বলেন, সালাউদ্দিনকে শারীরিভাবে নির্যাতন করার পরে বুকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার আজিজুর রহমান মনিরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রেসক্লাবে এসে তাদের ভুল স্বীকার করে ও আগামীতে এ ধরনের ঘটনা হবে না বলে আশ^াস দিলে আমরা বিষয়টি সমাধান করে ফেলি। যেহেতু বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি আর নেতৃবৃন্দও ভুল বুঝতে পেরেছে তাই ঘটনাটি আর অগ্রসর না করে সমাধান করা হয়।
তবে ঘটনার পর প্রথম আলোর এক প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালে উপস্থিত সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ময়নুল হক বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষ করে সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় সেখানে কী ঘটেছে, তা জানা যায়নি। আহত গণমাধ্যমকর্মীর চিকিৎসার দায়িত্ব তাঁরা নিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই প্রতিবেদককে কুলাউড়া জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল করিম বলেন, বিকেলে বিএনপির কিছু কর্মী কুলাউড়া রেলস্টেশনে ঢুকে জটলা সৃষ্টি করেন। এ সময় ট্রেন আসতে থাকায় রেল পুলিশের সদস্যরা নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের স্টেশনের বাইরে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে তাঁরা পুলিশের ওপর চড়াও হন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলার যুবদলনেতা কাওসার আহমদ নিপার বলেন, সাংবাদিক সালাউদ্দিনের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝির কারণে এই ধরতের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এতে আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ আমরা মর্মাহত ও দুঃখপ্রকাশ করেছি। তা ছাড়া তার চিকিৎসার দায়িত্বও আমরা নিয়েছি। তাকে হয়তো চিনতে পারেনি ছেলেপেলেরা। এই ঘটনায় আমরা দুঃখিত। তবে কাছে কার্ড না থাকায় হয়তো এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের লোকজনও ছিল উত্তেজিত।
বুকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার আজিজুর রহমান মনিরের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বিএনপির দুইজনকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএনপির কর্মীদের রেলওয়ে থানা পুলিশের (জিআরপি) সদস্যের উপর হামলায় রাহাতুল ইসলাম নামের এক পুলিশ আহত হয়। বুধবার রাতে কুলাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির দুই কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হামলার ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন পৌরসভার মধ্য জয়পাশার ছমির আলীর ছেলে লিমন আহমদ (২০) ও একই এলাকার শহীদ মিয়ার ছেলে শাওন মিয়া (২২)।
মিছিল ও সমাবেশের এক পর্যায়ে বিএনপির কিছু কর্মী স্টেশনের ভেতরে জটলার সৃষ্টি করলে রেলওয়ে পুলিশের সদস্য রাহাতুল ইসলাম তাদের বাইরে চলে যেতে বলেন। পরে বিএনপির কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার উপর হামলা করে।
ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই সিলেট রেলওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ শরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম জানান, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারী বিএনপির দুই কর্মীকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্যদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে ।