- অর্ধশতাধিক দোকান গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
- নিঃস্ব ব্যবসায়ীদের হাহাকার
- অধরা অবৈধ লিজদাতারা
বগুড়ায় রেলওয়ে জায়গা লিজ নিয়ে নকশা অমান্য করে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট সুপার মার্কেট নির্মাণ করায় গতকাল বুধবার দুপুরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা পূর্নেন্দু দেব এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। অভিযানে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বগুড়া রেলস্টেশনের বিপরীতে ১ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৭ বর্গফুট জায়গা লিজ নেয় রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট। এই কল্যাণ ট্রাস্টের অধিনে বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করে। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাবেক রেলওয়ে কর্মচারী হায়দার আলী। তিনি জানান, বরাদ্দকৃত জায়গায় বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ৮৭২টি দোকানঘর নির্মাণ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুকরা এন্টারপ্রাইজ।
নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত জায়গার বাইরে পার্কিং স্পেসে নিষেধ করা শর্তেও শতাধিক দোকান নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমন দাবি করেন হায়দার আলী। অপরদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করে হায়দার আলী ও তার ছেলে রায়হান কবির অন্যায়ভাবে দোকান গ্রহীতাদের কাছে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসব দোকান ঘর নির্মাণ করেছে।
এক একটি দোকানের আয়োতন ৮০ বর্গফুট। নির্ধারিত জায়গায় মোট ৮৭২টি দোকানঘর করা হয়। তাতে রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট দোকান প্রতি লিজ বাবদ পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া একেকটি দোকানঘর নির্মাণ এবং লাইসেন্স ফি বাবদ মোট খরচ হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুকরা এন্টারপ্রাইজ এবং বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হায়দার আলী প্রতিটি দোকান ঘর থেকে নিয়েছেন ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা। এমনই অভিযোগ করেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
লিজের জায়গায় মার্কেট করার আগে সরকারিভাবে নকশা অনুমোদন করা হয়। সেখানে পার্কিং স্পেস রাখা হয় ১২ হাজার ৬শ বর্গফুট জায়গা। কিন্তু মার্কেট নির্মাণের সময় পার্কিং এর কোনো জায়গা না রেখে প্রায় ৮০টি অতিরিক্ত দোকান করা হয়। যা থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হায়দার আলী প্রায় ৭ কোটি টাকা গ্রহণ করেন। এসব একাধিক দোকান ক্রেতারা জানান, তাদের জানা ছিল না এসব দোকান পার্কিং এর জায়গায়। দোকান হারিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন হায় হুতাশ করছেন।
জায়গা লিজ দেওয়ার সময় নকশা অনুযায়ী পার্কিং স্পেসের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পার্কিং স্পেসের জায়গাতেও দোকান নির্মাণ করে রেলওয়ের নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে লিজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শুকরা এন্টার প্রাইজ এর স্বত্তাধিকারী আব্দুল মান্নান আকন্দ নকশা বহির্ভুত দোকানঘর নির্মাণের কথা স্বীকার করে জানান, তিনি বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির চাহিদা অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ঘর নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৯২৩ টাকা নিয়েছেন অতিরিক্ত কোনো টাকা গ্রহণ করেন নি।
বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হায়দার আলী জানান, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত দোকানঘর নির্মাণ করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।
বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হায়দার আলী এবং সাধারণ সম্পাদক তার ছেলে রায়হান কবীর। সমিতির সভাপতি হায়দার আলীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলীর নামে মার্কেটের নামকরণ করা হয়। অভিযান চলাকালে সমিতির সাধারণ সম্পাদক রায়হান কবীরকে ধাওয়া করেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। মারধরে আহত হন রায়হান কাবীর।