- কাজ শেষ হয়েছে ৪৪.১৫ ভাগ
- যাত্রীসেবা দাঁড়াবে বছরে দুই কোটি ২০ লাখ
- নির্মাণ কাজ শুরু ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরে
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ ৪৪.১৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের অক্টোবরে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ৪৪.১৫ ভাগ কাজ শেষ করে ফেলেছি। করোনাকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছি। কাজের গতি এগিয়ে নিয়েছি। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের একটি। যদিও এখন কিছুটা পিছিয়ে আছি অচিরেই এই গতি আরো বাড়বে। তৃতীয় টার্মিনাল এখন দৃশ্যমান। ২০২৩ সালে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন।
মো. মাহবুব আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরকে নতুন করে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। সিলেট থেকে লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে যাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাজও জোর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ও প্রকল্প পরিচালক মাকসুদুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা বিশ্বের যেকোন বিমানবন্দরের চেয়ে ভালো করার প্রত্যাশা রয়েছে, তথা এখানে সেবার মান হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। বছরে যাত্রীপরিবহনে ক্ষমতা হবে দুই কোটি ২০ লাখ। কিছু অবকাঠামো সমস্যা আছে। এসব সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। লাগেজ ডেলিভারির ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি এসেছে। ইমিগ্রেশনে কোন যাত্রী যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সে অনুযায়ী আরো সচেতন হয়ে কাজ করা হচ্ছে। কাস্টমসেও যাতে কেউ হয়রানি না হয় সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।
লাগেজ হয়রানীর শিকার হলেও অপরাধীদের কেন শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছি। যে কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা সহজ হবে। তা ছাড়া আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি।
প্রবাসীকর্মীদের সঙ্গে বিমাকর্মীরা কেন অসদাচারণ করে? এদেরকে কেন সুন্দর আচরণ করতে প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহিতায় আনা হচ্ছে না এই প্রশ্নের জবাবে মো. মাহবুব আলী বলেন, এই অভিযোগ যথার্থ। আমরা এখন কঠোর হচ্ছি যাতে কারো সাথে অসদাচারণ না করা হয়। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি। কেননা তারা আমাদের সুনাম যেমন বিশ্বে ছড়াচ্ছে তেমনি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। আগের তুলনায় এসব অনেক বন্ধ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিমানবন্দরের এই নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৪০ বছর আগে নির্মিত বিমানবন্দরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে বছরে ৮০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করে। আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বিদ্যমান দুটি টার্মিনালের পাশাপাশি এবার তৃতীয় টার্মিনাল নির্মিত হলে যাত্রী পারাপারের ক্ষমতা উন্নীত হবে বছরে ২ কোটিতে৷ ২১ হাজার ৩’শ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে জাপানের মিটসুবিশি, ফুজিতা ও কোরিয়ার স্যামসং এটি নির্মাণ করছে৷
২০১৫ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তোলা হয়। ২০১৭ সালে ২৪ অক্টোবরে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির নির্বহী কমিটি-একনেক। এ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ১১ জুন। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচকের ব্যয় ধরা হয় ৫৭০ কোটি ৭৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। বেবিচক ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করে ২০২১ সালের এপ্রিলে তা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও যথা সময়ে কাজ শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হতে ৪ বছরের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে টার্মিনালের তিন তলা ভবন হচ্ছে। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই ভবনটির নকশাকার স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি-জেভি জয়েন্ট ভেঞ্চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন (প্রাইভেট) লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি। তৃতীয় টার্মিনালের বহির্গমণের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস (স্ব-সেবা) চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট এবং ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভেল কাউন্টার থাকছে। টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য ৪টি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনালে সঙ্গে বর্তমান টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে প্রকল্পের প্রথম ধাপে কোনও যোগযোগ ব্যবস্থা থাকছে না। তবে প্রকল্পের ২য় ধাপে কানেকটিং কোরিডোরের মাধ্যমে পুরনো টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালে সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং বিল্ডিং ভবন নির্মাণ করা হবে, সেখানে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে।
আনন্দবাজার/কআ