স্মার্ট ফোনের অতিরিক্ত আসক্ততা ও মাদকের ভয়াবহতা থেকে কিশোর বয়সী ছেলেদের দূরে রাখতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত কালীগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ফুটবলার তৈরি করবে তারা। তবে বিষয়টি খুব ভালভাবেই নিয়েছেন সাবেক জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলার ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা। গতকাল শনিবার সকালে ফুটবলার তৈরির বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন।
তিনি জানান, কালীগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার সভাপতির (ইউএনও) সাথে কথা বলে ফুটবলার তৈরি কাজ শুরু করেছি। শুরুতে আমরা ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট ফরম বিতরণ চালু করেছি। তবে আসন সংখ্যা সীমিত রেখেছি। প্রথম দফায় আমরা মাত্র ৪০ জন ১২ থেকে ১৬ বছরের কিশোরদের নিয়ে ফুটবলার তৈরির কাজ শুরু করবো। পরে পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, কালীগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার অধীনে গড়ে তুলা হবে ফুটবল একাডেমী। আর সেই একাডেমির ক্ষুদে ফুটবলারদের কালীগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আরআরএন) পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সপ্তাহে ৬দিন জাতীয় পর্যায়ের সাবেক দুইজন ফুলবলার দিয়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবকদের সাথে। তারা বলেন, আমাদের সময় আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার বেশি মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু এখনকার ছেলেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে মোবাইল ফোনেই বেশি সময় নষ্ট করে। এটা আগামী সমাজ বিনির্মানে খুব বেশি সুখকর কিছু না। তাছাড়া মাদকের ভয়াবহতা তো আছেই। তবে কালীগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার অধীনে ফুটবল একাডেমি ও ফুটবলার তৈরির বিষয়টি আমাদের জন্য আশার আলো। এটা হলে উঠতি বয়সী কিশোররা কিছুটা সময় হলেও ক্রীড়া বা ফুটবল চর্চায় সময় দিবে।
তারা আরো জানান, এক সময় কালীগঞ্জে অনেক বড় বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এখন আর ওই বড় বড় আসর হয় না। তবে এই ক্ষুদে ফুটবলারদের মাধ্যমে আবারো শুরু হবে ফুটবল টুর্নামেন্ট এমনটাই প্রত্যাশা করেন তারা।
জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ফুটবলার নারায়ণ পাল বলেন, বিগত দিনে আমি চেষ্টা করেছি স্থানীয়ভাবে ফুটবলটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সহযোগীতার অভাবে তা আর পারিনি। তবে যেহেতু নতুনভাবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় আবার শুরু হচ্ছে, নিঃসন্দেহে এটি ফুটবলের জন্য ভালো একটি খবর। আমি আমার অবস্থান থেকে সার্বিক সহযোহীতার চেষ্টা করবো। তবে এরসাথে ফুটবল সংশ্লিষ্টদের যুক্ত করতে পারলে আরো বেশি সুফল পাওয়া যাবে বলেও তিনি মনে করেন। একই কথা বলেন ১ম শ্রেণিতে খেলা সাবেক আরেক ফুটবলার আনোয়ার হোসেন ফিরোজ।
কালীগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আসসাদিকজামান বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর জানতে পারি, ফুটবলে কালীগঞ্জের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। স্বাধীন বাংলার প্রথম ফুটবল দলের সদস্য এনায়েত সাহেব এই কালীগঞ্জের সন্তান ছিলেন। তাছাড়া এক সময় স্থানীয়ভাবে এখানে অনেক বড় বড় ফুটবল টুর্ণামেন্ট পরিচালিত হতো। তবে এখন আর খুব একটা হয় না। এতো সুন্দর পরিবেশ আর এতো বড় মাঠ থাকা সত্ত্বেও কেন ক্রীড়া চর্চা হচ্ছে না! বিষয়টি আমাকে খুবই মর্মাহত করে। তাই উপজেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থার তত্ত্বাবধানে প্রথমে কালীগঞ্জ আর.আর.এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কার করা হয়।
ইউএনও আরো বলেন, ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে একটি ফুটবল একাডেমি তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি ফুটবলে আগ্রহী ভর্তি ইচ্ছুক কিশোর ফুটবলারদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছে। সব ঠিক থাকলে কিশোর ফুটবলারদেরকে জাতীয় পর্যায়ের সাবেক ফুটবলারদের দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আর সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এতে করে স্থানীয়ভাবে ফুটবলার তৈরি হবে। আশা করি তারা একদিন জাতীয় পর্যায়েও সুনাম কুড়াবে কালীগঞ্জের জন্য। তাছাড়া কিশোর বয়সী ছেলেদের ক্রীড়া বা ফুটবলমুখি করতে পারলে, তারা মোবাইলের আসক্ততা বা মাদকের ভয়াবহতাসহ সামাজিক নানা ব্যাধি থেকে দূরে থাকবে।