ঢাকা | শুক্রবার
২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রণক্ষেত্র নারায়ণগঞ্জ

রণক্ষেত্র নারায়ণগঞ্জ

গুলিতে নিহত ১, আহত শতাধিক

  • লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ
  • মানিকগঞ্জ-নেত্রকোনায় সংর্ঘষে আহত ৫৫

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সংঘর্ষে শাওন নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত শাওন ফতুল্লার এনায়েতনগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে বিএনপি এ কর্মসূচির জন্য কোনো পূর্বানুমিত নেয়নি। এদিকে নেত্রকোণায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া মানিকগঞ্জে সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিকসহ আহত হয় ২০জন। আমাদের নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নেত্রকোনা প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদন।

নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করতে গেলে পুলিশ বাধা দিলে এ ঘটনা ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ও ডিবির সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। বেধে যায় সংঘর্ষ। পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। প্রতিউত্তরে পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে নগরীর ডিআইটি, মন্ডলপাড়া, দেওভোগ, নিতাইগঞ্জ, ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুরো নগরী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ওইসব এলাকার রাস্তাঘাট সাধারণ মানুষ শূন্য হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সকল মার্কেট-বিপণি বিতান। থমকে যায় যানবাহন চলাচল। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো নারায়ণগঞ্জ।  গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাওন নামে এক যুবদল নেতা নিহত হয়। নিহত যুবদল নেতা শাওন ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের গোপাল নগর এলাকার শাহেদ আলীর ছেলে। সে গ্রিল ওয়ার্কশপে কাজ করতো। তার মরদেহ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক নাজমুল হোসেন। এছাড়াও সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, বিএনপি ছাত্রদল যুবদলের শতাধিক গুলিবিদ্ধ ও মারাত্মক আহত হয়েছেন।

গুলিবিদ্ধসহ আহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমান সাদেক, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খোকন ফারুক খোকন, সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, জেলা যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন চৌধুরী সালামত, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সহিদুল ইসলাম স্বপন, যুগ্ম সম্পাদক শাহিন আহমেদ, মহানগর যুবদল নেতা সাহাদুল্লাহ মুকুল, মো. ইব্রাহীম, নাঈম মিরাজ, মো. মোতালিব, সুমন হোসেন, সাগর হোসেন, আবু সুফিয়ান, কায়সার হামিদ, নুরুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, খোকন মিয়া, জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ, যুগ্ম সম্পাদক রাকিব হাসান রাজ, সোনারগাঁ উপজেলা যুগ্ম আহবায়ক মনির হোসেন,পিয়ার হোসেন নয়ন,কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল সাত্তার, দুপ্তারা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহত রমজান হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা ওমর ফারুক, মহানগর ছাত্রদল নেতা ইব্রাহিম, তুহিন, প্রিতম, ফারুক, পায়েল, মিনহাল, ইমন, সিমান্ত, মোক্তাদির মো. বাদল ভুল, নাবির হোসেন নবীন, রাসেল প্রধান, জুয়েল আরমান, ফারুক হোসেন সুজন, মো. আকিব, মো. আলিব, শাহিন, জাহাঙ্গীর, রাজু, শরীফ, ইউনুস, সাগর, আব্দুস সালাম,মো. আখতার, মুন্না, মো. কাদির, শরীফুল ইসলাম,  মো. সবুজ, মোমেন, শিহাব , শামসুল হক, মো. ইব্রাহিম, আশরাফুল, গার্মেন্ট শ্রমিক তাজুল ইসলাম, শহরের করিম মার্কেটের ইউএস হোসিয়ারীর শ্রমিক সোয়াদ হোসেন, উজ্জল ভৌমিক, মিন্টু, সজিব, মো. নাসির, পথচারী শাহনাজ বেগম, শিল্পী, দীপ্ত টিভির জেলা প্রতিনিধি গৌতম সাহা ও মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আজমির ইসলাম। আহতদের মধ্যে মো. বাদল, নাবির হোসেন নবীন, রাসেল প্রধান, জুয়েল আরমান, ফারুক হোসেন সুজন, মো. আকিব, সুলতান মাহমুদ, মো. আলিব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।ছাত্রদল নেতা ফারুক হোসেন সুজনের অবস্থা আশংকাজনক।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধরা হলেন- শাহিন, জাহাঙ্গীর, রাজু, শরীফ, ইউনুস, সাগর, আব্দুস সালাম, মো. আখতার, মুন্না, মো. কাদির, শরীফুল ইসলাম,  মো. সবুজ, মোমেন, শিহাব , শামসুল হক, মো. ইব্রাহিম, আশরাফুল, গার্মেন্ট শ্রমিক তাজুল ইসলাম, শহরের করিম মার্কেটের ইউএস হোসিয়ারীর শ্রমিক সোয়াদ হোসেন, উজ্জল ভৌমিক, মিন্টু, সজিব, মো. নাসির, পথচারী শাহনাজ বেগম, শিল্পী, দীপ্ত টিভির জেলা প্রতিনিধি গৌতম সাহা, মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আজমির ইসলাম ।

 অন্যদিকে, টিয়ারশেলে নগরীর ডিআইটি এলাকায় অবস্থিত মর্গ্যান স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়শা সুলতানা, লামিয়া, আফসানা মীম, মিমিয়া, রোকেয়া, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হানী, আঁখি, উম্মে কুলসুমসহ ১০ছাত্রী আহত হয়েছেন।

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালীতে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত গণমাধ্যমকে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এদেশের প্রশাসন এক চোখা নীতিতে চলে। আওয়ামী লীগের নেতারা রাস্তা বন্ধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সভা সমাবেশ করে তখন তারা কোনো এ্যাকশন নেয়না অথচ আমরা দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে একটি শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ তাকে বাঁধা দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায়। আমাদের এক কর্মী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অগনিত। নিরিহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর এভাবে নির্বিচারে গুলি চালাতে পুলিশের হাত একবারও কাঁপলো না। তারা একবারো ভাবলোনা কি করে একটি মায়ের বুক তারা খালি করলো। আমি এ জঘন্যতম ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, এক সপ্তাহ পূর্বেই আমরা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহরে র‌্যালি করবো। পুলিশের পক্ষ থেকে কিন্তু আজকে আমাদের বলা হয়নি যে অনুষ্ঠান করতে পারবেন না। আজকে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয় এবং আমাদের নেতা-কর্মীদের অর্তকিত হামলা ও গুলি বর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে আমাদের এক কর্মী শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পক্ষে থেকে নিহত শাওনের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। সেইসাথে শাওন হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

তবে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোহাম্মদ রাসেল বলেন, তারা কোনো ধরনের পূর্বানুমতি ছাড়াই সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছিলেন। একটি গণতান্ত্রিক দেশে  কোন মিছিল মিটিং সমাবেশ করতে হলে পূর্বানুমতির প্রয়োজন আছে। কিন্তু বিএনপির সমাবেশ মিছিলের পূর্বানুমতি  সম্পর্কে আমি জানি না। এছাড়া  জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে, সেও জানে না। এতে বাধা দিলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটানো হয় জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ছোড়ে। সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের অন্তত ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন