প্রতিটি গাছের মগডালের শাখা-প্রশাখার সবুজ পাতার আড়ালে উকি দিচ্ছে শত শত সাদা-কালো বাহারি রঙের পাখি। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন জোনাকির আলো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। শরতের নিলুয়া বাতাসের দোলায় ডানার ঝাপটানি দিয়ে আকাশে পেজা তুলোর মেঘপুঞ্জের মত ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে অসংখ্য পাখি। কেউবা বসে আছে ধ্যানির মত। এ যেন অঘোষিত শামুক খোল পাখির অভয়ারণ্য। বলা হচ্ছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে থানা ক্যাম্পাস ও মাছ বাজার চত্বরের শামুক খোলের অভয়ারণ্যের কথা। এ অভয়ারণ্য যেন ৮ থেকে ১০ বছরের।
থানা ও বাজারে রয়েছে সু-বিশাল কড়ই, শিমুল, বটগাছ। এ গাছগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে শামুক খোল পাখি সংসার পেতে নিরাপদ প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করছে। এমন নিরাপদ প্রজননের অনুকূল পরিবেশ পেয়ে দিন দিন বাড়ছে পাখির সংখ্যা। প্রতিটি বাসায় এসেছে ৩ থেকে ৪টি করে নতুন অতিথি। মা পাখিরা ব্যস্ত এদের সামলাতে। বাবা পাখিরা ব্যস্ত বিভিন্ন জলাশয় থেকে খাদ্য সংগ্রহে। অন্যপাখিদের সময় কাটছে নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করে। নিত্যদিন এ সব পাখির ওড়াউড়ি, কলকাকলি, ডানা ঝাপটানোর মৃদুময় ছন্দে ঘুমভাঙ্গে ব্যস্ততম শহরে রাত জেগে ঘুমিয়ে পড়া মানুষের। ভোরের আলো উকি দিতে খোলা আকাশে ডানা মেলে দেয় ঘুম ভাঙানির পাখার ঝাপটানি। দিনের বার্তায় ঘুম ভাঙিয়ে দলবেঁধে চলে যায় খাদ্য আহরণে। গোধুঁলির রঙ ডানায় মেখে শো-শো শব্দের মিষ্টি কলতানে নীড়ে ফেরা। থানায় ধরে আনা অপরাধীর স্বজনসহ বিচার প্রাপ্তির ভিড়। বাজারে সওদা করতে আসা মানুষের কোলাহল এমন প্রকৃতির আকাশ-জমিন সৃষ্টি হয় জমকালো পরিবেশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরায়ণ আর ব্যস্ত শহরে পাখপাখালির শুধুই কলকাকলি, শরতের আকাশে উড়ে বেড়ানো বাউল মেঘের ভেলা, চারদিকের সবুজের নৈসর্গিক দৃশ্য সেখানে এক মোহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এমন দৃশ্য স্থানীয়রাও খুঁজে পেয়েছে বিনোদনের খোরাক, উদাসি করে তুলেছে পাখি প্রেমিদের।
স্থানীয়দের ভালবাসা, থানা প্রসাশনের সখ্যতায় এমনই অনাবিল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে ওইসব পাখি। মানুষ আর পাখপাখালির মিলেমিশে বসবাস সচরাচর চোখে পড়েনা। হাট ইজারাদার ইমরান হোসেন অভি জানান, উপজেলার চারপাশ পাখিদের খাদ্য আহরণে রয়েছে, ধাইজান, চাড়ালকাটা নদী, বিল, মজা পুকুর। এসব জলাশয়গুলোতে প্রচুর মাছ ও শামুক পাওয়া যায়। তাই বছরের ৫/৬ মাস এত পাখির দেখা মেলে। এখানে কাউকে পাখি শিকার করতে দেওয়া হয়না। তবে উপজেলা প্রসাশনের সহযোগিতায় বাজার এলাকায় পাখি সংরক্ষণ কমিটির প্রয়োজন। প্রসাশনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে এলাকায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ এই মর্মে জেল-জরিমানা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে প্রচারসহ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলে পাখির আরো অভয়ারণ্য বাড়বে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে বাজার এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।