ঢাকা | মঙ্গলবার
৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বায়ুদূষণে ঘরই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ

বায়ুদূষণে ঘরই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ
  • রাতে বেড়ে যায় দূষণের মাত্রা
  • চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে দূষণমাত্রা বাড়ে: ক্যাপস

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই নাম আসছে রাজধানী শহর ঢাকার। অনেকেই দূষণ-যানজটের কারণে সহজে শহরে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে চায় না। ছুদির দিনেও পরিবার নিয়ে বাসায় সময় কাটানোকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তবে বাইরের দূষণের তুলনায় ঘরের বায়ু কতটা নিরাপদ সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বাইরের তুলনায় ক্ষেত্র বিশেষ ঘরের ভিতরে বেশি দূষণের কথা বলা হচ্ছে।

গতকাল স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপি ‘বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য প্রভাব নিরুপণ’এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্র (ক্যাপস)-এর আয়োজনে পারিবেশ বিষয়ক এ কর্মশালায় ৪০ জন অংশগ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় দিনের একটি সেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির লেকচারার সামিয়া নাহিয়ান। এতে তিনি ঢাকা শহরের ৬টি স্থানের ওপর একটি গবেষণা চালিয়ে গৃহের মধ্যে দূষণের পরিমাণ বেশি থাকার প্রমাণ পান। ঘরের বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে এ দূষণের মাত্রা বেশি বেড়ে যায়। ফলে শিশুরা বয়স্কদের তুলনায় দ্বিগুণ ঝুঁকিতে থাকে। যেখানে ১৯৩০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার মতো উচ্চ ঝুঁকি থাকে। রাতে এ দূষণের মাত্র বেশি থাকে।

সূর্যের আলো না থাকায় আবহাওয়া শীতল হওয়ায় রাতে নিন্মতাপের ফঁদ তৈরি হয়। বাসার দেয়াল ও আকার ছোট হওয়ার কারণে এ দূষণ বাড়ছে বলেও মনে করেন এ তরুণ শিক্ষক। তবে গৃহের ভিতর দূষণ বাইরে থেকেই প্রবেশ করে। কিন্তু বের না হতে পারলে তা মারাত্মক দূষণ ঘটায়।

এ থেকে উত্তরণের জন্য সিগারেট বাসায় গ্রহণ ও নির্মল বায়ু নির্গমন রাখার প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি। রান্নার কাজে ভালো মানের জ্বালানী ব্যবহার করার পরামর্শ এ গবেষকের।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য তানবীর সাকিল জয় বলেন, এখানে দূষণের মাত্রা শ্বাস নিলেই বুঝা যায়। এসময় ট্যানারির দূষণ বাড়লেও পরিবেশ অধিদপ্তর কিছু করতে পারছে না বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের সুপ্রি অথরিটি থাকার কথা থাকলেও তা নেই বলেও আফসোস করেন মন্ত্রণালয়টির স্থায়ী কমিটির এ তরুণ সদস্য।

কোভিড থেকে উত্তরণের জন্য আরো বেশি উন্নয়ন ও দূষণ করার মনোভাব গত কপ সম্মেলনে ছিল বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী পরিবেশকে সাথে নিয়েই উন্নয়ন করতে বলেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে ক্যাপসের পরিচালক আহমেদ চেয়ারম্যান ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার আলাদা পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস চালু করার দাবি জানান। বছরে দেশে বায়ু দূষণের ক্ষতি ৬০ হাজার কোটি টাকা বিশ্বব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। যা দুটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের সমান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মু. জিয়ায়ুল হক বলেন, আলাদা ক্যাডার সার্ভিস না হওয়ায় তরুণরা এবিষয়ে আগ্রহী হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তরকে একটি বিশেষায়িত প্রতষ্ঠান করতে হলে এখানে পরিবেশ নিয়ে পড়াশোনা করা লোকবল দরকার বলেও মনে করেন এ সরকারি কর্মকর্তা।

প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নেয়া বিশেষ অতিথি ডা. চৌধুরী লেলিন বলেন, দূষণের উৎস বন্ধ না করে শুধু চিকিৎসার মাধ্যমে এ দেশের মানুষ রোগ তেখে মুক্ত রাখা যাবে না।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অন্য শিক্ষকরা ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী এ কর্মশালায় অংশ নেয়। পরে তাদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হয়।

আননদবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন