- সিনেমা শিল্পে বিপ্লব
প্রযুক্তির উন্নয়নে বিলুপ্তির পথে রুপালী পর্দা। নব্বই দশকেও বড় পর্দায় সিনেমা দেখাটা বাঙালির ঐতিহ্য ছিল। ছুটির দিন কিংবা উৎসবে পরিবারের সবাই মিলে হলে যাওয়াটা শখের বিষয় ছিল। প্রিয় শিল্পীদের মতো কথা বলা, পোশাক পরা ছিল সংস্কৃতির একটি অংশ। ডিজিটাল আলোয় সেই চেনা ঐহিত্য এখন অচেনা। পৃথিবী পরিণত হয়েছে বিশ্বগ্রামে। পুরো পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। মোবাইল কিংবা কম্পিউটার, একটি ডিভাইজের মধ্যেই পৃথিবীর সবকিছু। ফলে সিনেমা হলে দর্শক নেই। দেশে যেখানে প্রেক্ষাগৃহ ছিল ১২ শতাধিক, এখন সেখানে ৬২টির মতো।
দেশে প্রথম ডকুমেন্টারি ছবি তোলা হয় ১৮৫৬ সালে। পুরো একশ’ বছর পর ১৯৫৬ সালে ফের ছবি তোলা হয়। ছবির নাম ‘মুখ ও মুখোশ’। ১৯৫৯ সালে জাগো হুয়া সাভেরা, আকাশ আর মাটি, মাটির পাহাড় ও এদেশ তোমার আমার। এরপর ১৯৬০ সালে ফতেহ লোহানী তৈরি করেন ‘আসিয়া’। এহতেশাম নির্মাণ করেন ‘রাজধানীর বুকে’। স্বাধীনতার পূর্বে উর্দু ছবি নির্মাণের জোয়ার ছিল। স্বাধীনতার পর একচেটিয়া বাংলা নির্মাণ হয়। নব্বই দশক পর্যন্ত সিনেমা দেখা ছিল বিনোদন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সেই বিনোদন পাল্টে মোবাইল ফোনে ঝুঁকে পড়ে।
এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ইলেকট্রনিকস তাদের প্রথম ক্যামেরা ফোন চালু করেন। ২০০৬ সালে প্রায় সব মোবাইলে ক্যামেরা যুক্ত হয়। ২০১০ সালে এইচটিসি ইভো থ্রিডি ফোনে ছবি তোলার পাশাপাশি ভিডিও করা শুরু হয়। যা পরবর্তীতে ম্যাজিক আকার ধারন করেছে। এখন মোবাইলে কথা বলা, ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং নেটে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় আনা যায়। সিনেমা দেখতে এখন হলে যেতে হয় না, হাতের মোবাইলই সিনেমা হল। তবে বড়পর্দায় সিনেমা দেখার মজা আলাদা।
যদিও ভিডিও প্রাইরেসির কারণে অনেক দর্শক ছোটপর্দায় মন দিয়েছে। তারা তিনঘণ্টা সিনেমা হলে না কাটিয়ে টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের মনিটরে ৩ ঘন্টার সিনেমা টেনেটুনে এক ঘণ্টায় শেষ করে। এছাড়া বড়পর্দায় দেখার মতো পরিবেশ হারিয়ে গেছে চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিবেশক ও প্রযোজকদের কারনে। সিনেমায় কাটপিস, নোংরা ছবি এবং নোংরা পরিবেশই এ জন্য দায়ী বলে মনে করেন সাংস্কৃতিক মনারা। ওই সময়ে বিটিভিতে মাসে একটি সিনেমা প্রদর্শণ হতো। বর্তমানে চব্বিশ ঘণ্টাই সিনেমা। ইউটিউবে মন চাইলেই পছন্দের সিনেমা।
এদিকে চলচিত্রের বয়স ১২৭ বছর হয়েছে। ১৮৯৫ সালে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ের হাত ধরে চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু হলেও সেটা শুধুমাত্র ম্যাজিক যন্ত্র ছিল। পরবর্তীতে প্রযুক্তির উন্নয়নে ম্যাজিকটাই শিল্প হয়েছে। সেই শিল্প দিয়েই মানুষের সংস্কৃতিকে চিত্রায়িত করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। গোড়ার দিকের চলচ্চিত্র ছিল সাদা-কালোয়, দৈর্ঘ্য ছিল এক মিনিটেরও কম, ছবি ছিল নির্বাক। ১৮৯০ সাল থেকেই একাধিক শট সংবলিত বেশ কয়েক মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরী হতে থাকে।
১৮৯৮ সালে তৈরি হয় প্রথম ঘূর্ণায়মান ক্যামেরা যা দিয়ে প্যানিংশট নেওয়া সম্ভব হয়। ১৮৯৭ সালে প্রথম ফিল্ম স্টুডিও তৈরি হয়। ১৯০০ সাল থেকে কন্টিন্যুইটির মাধ্যমে ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং ক্লোজ-আপ শটের ব্যবহার শুরু হয়। এসময় ছবিকে চেজ ফিল্ম বলা হত। প্রথম একাধিক রিল সংবলিত কাহিনীচিত্র ১৯০৬ সালে অস্ট্রেলিয়াতে তৈরি হয়। ১৯০৫ সালে প্রথম স্থায়ী প্রেক্ষাগৃহ স্থাপিত হয় ‘দ্যা নিকেলোডিয়ান’। ১৯১০সালে অভিনেতা অভিনেত্রীদের নাম পর্দায় লেখা শুরু হলে তাদের জয়প্রিয়তার রাস্তা খুলে যায়। বিশ্বে চলচ্চিত্র নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যায় এবং সবাক যুগের চলচ্চিত্র শেষ হয় ১৯২৯ সালে। সবাক যুগের পর ছবিতে কথা, গান ও সংগীত সংবলিত হতে থাকে। সারা বিশ্বের মতো ভারতবর্ষে চলচ্চিত্র নির্মাণের সাফল্য আসে।