শ্রাবণ শেষ চলছে ভাদ্র মাস। তবু বৃষ্টির দেখা নেই। এতে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। আমন ধান রোপণের জন্য বর্ধিত দামে ডিজেল কিনে সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন চাষিরা। চলতি রোপা আমন মৌসুমের শুরুতেই অনাবৃষ্টি-খরা, বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ডিজেলের দামও। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি ক্ষেত্রের সর্বত্র। চাষাবাদে গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের খরচ। এসব চিন্তা মাথায় নিয়েই রোপা-আমন চাষে মাঠে নেমেছে গুরুদাসপুরের কৃষকেরা।
সারাদেশে জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে নাটোরের গুরুদাসপুরে রোপা আমন চাষে কৃষকের খরচ বেড়েছে। গত শুক্রবার সকালে উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের পিপলা এলাকার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বিঘা জমি চাষে নেওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা। যেখানে সপ্তাহ খানেক আগেও প্রতি বিঘায় চাষ বাবদ নেওয়া হতো ৩৫০ টাকা। আর এখন তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিঘা প্রতি ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিজেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ বেড়ে গেছে। খেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে সেচ দেওয়া, মাড়াই করা, ফসল ঘরে তোলা, শ্রমিকের মজুরি—সহ সব ক্ষেত্রেই বাড়তি খরচের বোঝা টানতে হচ্ছে কৃষকদের।
কয়েক দিনের ব্যবধানে ইউরিয়া ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আমনের ভরা মৌসুমে খরচ মেটাতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অনাবৃষ্টি। এবার সারা দেশেই বৃষ্টি কম হওয়ায় আমন ধানে সেচ বেশি লাগছে। এতে উৎপাদন খরচ আরও বাড়ছে। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে খরচ উঠবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
জানা যায়, এক বিঘা জমিতে রোপা আমনের চারা রোপণের জন্য উপযোগী করতে কৃষকের হালচাষের জন্য খরচ হতো ১৪শ’ টাকা। আর এখন ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পরে প্রতি বিঘায় খরচ হচ্ছে ১৮শ’ টাকা। প্রতি বিঘা জমি চাষের জন্য প্রস্তুত করতে চারবার হালচাষ করতে হয়। প্রতি চাষে খরচ হচ্ছে ৪শ টাকা। পিপলা গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আগে এক বিঘা জমি রোপা আমন রোপনের জন্য প্রস্তুত করতে আমার হালচাষে খরচ হয়েছে ১৪শ’ টাকা। আর আজ সকালে এক বিঘা জমি হালচাষের জন্য প্রস্তুত করতে খরচ হলো ১৮শ’ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষের জন্য খরচ বেড়েছে ৪শ’ টাকা। এছাড়াও এখনও সেচ খরচ, শ্রমিক খরচসহ আরো অনেক খরচ তো আছেই।
বিয়াঘাট মাঠের চাষি সোহেল রানা বলেন, ডিজেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রতি বিঘা জমিতে চাষ দিতে এখন অতিরিক্ত ৪শ’ টাকা খরচ হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমাদের জমি চাষ করে লাভবান হওয়ার আশঙ্কাও কমে যাচ্ছে।
পাওয়ার টিলার চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগেও ডিজেল ৮০ টাকা লিটার কিনে হালচাষ দিয়েছি। তবে, দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতি লিটার ১১৪ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। এক বিঘা জমি প্রস্তুত করতে চারবার চাষ দিতে হয়। প্রতিবার হালচাষের জন্য আগে ৩শ টাকা নেওয়া হতো। তবে, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন জমির শ্রেণিভেদে ৪শ থেকে ৪৫০ টাকা প্রতি হালচাষ নেওয়া হচ্ছে। এখন প্রতি বিঘা জমি প্রস্তুত করতে ১৮শ’ টাকা নিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, সারাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে। এ কারণে ডিজেল চালিত পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি হালচাষের জন্য প্রস্তুত করতে হলে কৃষকের বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে। গুরুদাসপুরে এ মৌসুমে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২ হেক্টর। এ পর্যন্ত ৪৯৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ সম্পন্ন হয়েছে।