ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৩০ পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ প্রস্তাব

৩৩০ পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ প্রস্তাব

ডলার সংকট কমাতে আমদানির লাগাম টানতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এরই অংশ হিসেবে আমদানির ৩৩০ পণ্যে নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ করেছেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। এদিকে, আমদানি নিরুসাহি করতে বিদেশি ফল, স্বর্ণ, মদ বিয়ার, স্মার্টফোন, গাড়ি, এয়ারকন্ডিশন, রেফ্রিজারেটর, মশলা পণ্য সহ মোট ৩৩০ ধরনের পণ্যের শুল্ক-কর ও ট্যারিফ মূল্য বাড়ানোর সুপারিশ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ আমদানিতে ব্যয় করে ৮২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে রপ্তানি হয় ৪৯ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। এসময় বাণিজ্য ঘাটতি ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।  বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি ৪৬ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। এর মধ্যে প্রধান ২৫ ধরনের পণ্যের আমদানির পেছনে ব্যয় হয় ৭০ দশমিক ৪১ শতাংশ। বাকি ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় বিবিধ বা অপ্রধান পণ্য আমদানির পেছনে। আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।

আমদানি ব্যয় কমিয়ে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত ২০ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনকে নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশন ৩ সদস্যবিশিষ্ট এক কমিটি গঠন করে। এই কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়।

নিয়ন্ত্রিত পণ্যের তালিকায় আছে সব ধরনের মদ বিয়ার, সিগারেট, চুরুট, তামাকজাতীয় পণ্য, আম, কমলা, ছোট কমলালেবু, তাজা-শুকনা আঙ্গুর, তরমুজ, আপেল, নাশপাতি, পাম ফল, চেরি ফল, স্ট্রবেরি, কিউই ফল, কফি, গ্রিন টি, চা পাতা, গোলমরিচ, দারচিনি, লবঙ্গ, পাস্তা, মিষ্টি বিস্কুট, ওয়েফার, কেক, পাউরুটি, জ্যাম-জেলি, কমলা আপেলের জুস, সব ধরনের ফলের রস, সয়া সস, টমেটো কেচাপ, স্যুপ, আইসক্রিম, পানি, লবণ, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, পাইনবাদাম, সুপারি, খেজুর, ডুমুর ফল আভোকাডো ইত্যাদি।

এছাড়া রয়েছে প্লাস্টিকের প্লেট, বাথটাব, রান্নাঘরের বেসিন, দরজা-জানালা, হাতব্যাগ, স্যুটকেস, চামড়ার বেল্ট, প্লাস্টিকের বোর্ড, অগ্নিনির্বাপক দরজা, সিগারেট পেপার, সুতির প্যান্ট-শার্টের কাপড়, প্রিন্টেড কাপড়, কার্পেট, থ্রি-পিস, হাতে তৈরি লেস, ছাতা, প্লাস্টিকের ফুল, মার্বেল-গ্রানাইট, ইমিটেশন জুয়েলারি, ছাদে ব্যবহত টাইলস, সিরামিকের সিংক, বাথরুম ফিটিংস, বাথরুমে ব্যবহত গ্লাসওয়্যার, টেবিলওয়্যার, স্যানিটারি ওয়্যার, রেজর, ব্লেড, ইলেকট্রিক ওয়্যার, সব ধরনের তালাচাবি, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশনার, ডিপ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স সামগ্রী, স্মার্টফোন, স্পিকার, সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি, সাইকেল, দেয়াল ঘড়ি, অ্যালার্ম ঘড়ি, গাড়ির সিট, কাঠের ফার্নিচার, ভিডিও গেম, তাস, টেবিল টেনিস ও টেনিস খেলার সরঞ্জাম, বল, মাছ ধরার বড়শি ইত্যাদি।

এর বাইরে স্বর্ণালংকার ও স্বর্ণের বার আমদানি নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি স্মার্টফোন আমদানিতে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়। যেসব পণ্যের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করলে শিল্পোৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই, সেসব পণ্যের আমদানি সাময়িকভাবে বাড়তি শুল্কারোপের মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়। অন্যদিকে যেসব ভোগ্যপণ্য সমাজের উচ্চ ক্রয়ক্ষমতা সম্পন্ন শ্রেণি ভোগ করে থাকে, সেসব পণ্যের শুল্কহার বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন