- প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১৩০ টাকা
মালচিং পদ্ধতিতে কানিয়া জাতের তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন সামসুল হক। ইতোপূর্বে তিনি ব্রকলি, স্কোয়াশ, রকমেলন, হলুদ তরমুজ, সাম্মাম চাষ করে দেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তিনি মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভুবনঘর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে ও ভূবনঘর মর্ডান এগ্রোফার্মের সত্ত্বাধিকারি সফল কৃষি উদ্যোক্তা সামসুল হক সামসু।
উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় ১ বিঘা জমিতে এবার কানিয়া জাতের তরমুজ চাষ করেন। এ তরমুজ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এ তরমুজের ক্ষেত দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অসংখ্য আশপাশের এলাকার কৃষক ও উৎসুক লোকজন। এ মৌসুমে স্বাদে মিষ্টি জাতের এ তরমুজ বেশ সাড়া ফেলেছে এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুটি ভাগে ভাগ করে তরমুজের চারা লাগনো আছে। পুরো জমিতে বাশের খুঁটির ওপরে জাল বিছিয়ে মাচা তেরি করা হয়েছে। এতে তরমুজগাছের লতা বেড়ে উঠেছে। পুরো মাচা গাছে ছেয়ে আছে। মাচার মধ্যে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে আছে বিভিন্ন সাইজের বাহারি তরমুজ। চাষি সামসু বিক্রির উপযুক্ত তরমুজ কাটছেন, আর ঝুঁড়িতে তুলছেন। সাধারণত এ মৌসুমে তরমুজ পাওয়া যায় না। অনেক খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা জমি থেকেই তরমুজ কিনে নিতে দেখা যায়।
চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাজার থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল ওহাব বলেন, এ মৌসুমে তরমুজ পাওয়া যায় খবর পেয়ে এসেছি। জমিতে বিভিন্ন আকারের তরমুজ, দামে ভিন্নতা আছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন তিন থেকে চার কেজি। কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে কিনেছি। এগুলো ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।
কৃষক মামসুল হক সামসু জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ঝিঙ্গা, লাউ, মূলা, টমেটো, ব্রকলি, বাঁধা কপি ও ফুল কপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছি। তবে গত বছর ব্রকলি, স্কোয়াশ, হলুদ তরমুজ, রকমেলন, মরুর দেশের ফল সাম্মাম ও বারমাসি তরমুজ চাষ করেও ভালো সফলতা পেয়েছি। এবারসহ ৩ বছর থেকে আমি কানিয়া, ম্যাজিক বয় ও হানিডিও জাতের তরমুজ চাষ করছি। প্রথম বছর লোকসান হলেও পরবর্তী বছর থেকে খুবই লাভ হচ্ছে।
ইউটিউবে দেখে আমি তরমুজ চাষে আগ্রহী হই। এরপর বীজ সংগ্রহ করে এক বিঘা ধানি জমি তরমুজ চাষের জন্য প্রস্তুত করি। পরে তরমুজের বীজ বপন করি। তরমুজের চারা বড় হলে সেগুলো বাঁশ দিয়ে তৈরি মাচায় ছড়ানো হয়। এরপর প্রথমে ফুল আসে। পরে ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসে সবুজ, হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ। দুই মাসের মধ্যে তরমুজ পরিপক্ব হয়। ১ বিঘা জমিতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। তবে এখন প্রর্যন্ত তিনি বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহম্মেদ জানান, সামসুল হক সামসু এই উপজেলার একমাত্র কৃষক যিনি প্রথম কানিয়া, ম্যাজিক বয় ও হানিডিও প্রজাতির তরমুজ চাষ করছেন। কানিয়া জাতের তরমুজের চাষ বারো মাস হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমন প্রক্রিয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। কম সময়ে এই জাতের তরমুজ চাষে কৃষকরা ভালো লাভ করতে পারবেন। তাই এই প্রজাতির তরমুজ চাষ সমপ্রসারণের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে এবং কোন কৃষক আগ্রহী হয়ে এ ধরনের উদ্যেগ নিতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিস সব ধরনের কারিগরী সহযোগীতা ও পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।