ঢাকা | বুধবার
১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোণায় বন্যায় ক্ষতি ৩০৫ কোটি টাকা

নেত্রকোণায় বন্যায় ক্ষতি ৩০৫ কোটি টাকা

নেত্রকোণায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ভেঙে গেছে রাস্তা-ঘাট, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, মারা গেছে গবাদি পশু সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকার সম্পদ। কোনো কোনো এলাকার অবস্থা দেখে বুঝার উপায় নেই, এটা বন্যার তাণ্ডব নাকি যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোনো এলাকা।

স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারে আঘাত করা এ বন্যায় সর্বস্ব হারিয়ে সর্বশান্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন জেলার কয়েক হাজার পরিবার তাই দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচার স্বপ্নই আজ তাদের কাছে দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এদিকে বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপন করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক নেয়া হবে ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

গত মাসের ১৬ তারিখ দিবাগত রাতে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলায় অতর্কিত আঘাত হানে বন্যা। একে একে প্লাবিত হয়ে পরে জেলার ১০ উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকাই। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রায় ১ লাখ পরিবারের প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১ হাজার ৩৫০টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার ৮৬৯টি বাড়ি। ধ্বংস হয়ে গেছে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৭ শত কিলোমিটার রাস্তা। ৫টি ব্রীজ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৫৯টি ব্রীজ।

এছাড়াও প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রায় ১৭ কোটি টাকা, মৎস্য বিভাগের ১৬ কোটি টাকা, কৃষি বিভাগের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও বন্যার এ প্রবল তাণ্ডবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাবসা-বাণিজ্য, গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা ব্যবস্থা, বিদ্যুৎখাত, মসজিদ-মন্দিরসহ প্রায় প্রতিটি খাতই। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৩০৫ কোটি টাকা। যার ফলে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নেত্রকোণা। বিধ্বস্ত হয়ে পরেছে জেলার নিম্নআয়ের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা, তাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

দুর্গত এলাকার সাধারণ মানুষ জানায়, আমরা অতিকষ্ট করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে সেখানে সন্তান-সন্তুতি, গবাদি পশু নিয়ে থাকতাম। কিন্তু হঠাৎ বন্যার পানি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঘরগুলোও বানের পানিতে ভেসে গেছে। এখন একদিকে খাবারের চাপ, অন্যদিকে থাকার জায়গার অভাব। এমতাবস্থায় সরকারি সাহায্য খুব বেশি জরুরি।

ব্যবসায়ীরা জানায়, সব হারিয়ে রীতিমত সর্বশান্ত হয়ে গেছি। কোনরকম জীবন যাপন করছি। প্রকৃতির এই তান্ডবে সব হারিয়ে আজ আমরা নি:স্ব। সমাজের বিত্তবান ও সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই।

একদিকে বন্যার তান্ডবে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, পুকুরের মাছ অপরদিকে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের হামলা। সব মিলিয়ে পুরো বিধ্বস্ত অবস্থায় আছি। জানিনা কিভাবে চলবে আগামী।

মাছচাষিরা জানায়, আমাদের ফিসারীর প্রায় ৮০ভাগ মাছ চলে গিয়েছে। যার ফলে একটা অবর্ণনীয় ক্ষতির সামনে পরতে হয়েছে। সরকারি সহযোগীতা না পেলে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা আদৌ সম্ভব হবে কি না জানিনা।

এব্যাপারে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, ইতিমধ্যে সারাজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সেগুলো সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবর পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই কার্যকর ভুমিকা গ্রহন করা হবে।

এমতাবস্থায় দ্রুত বন্যা দুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তাদের বাসস্থান, কর্মসংস্থানসহ সকল দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মুখে হাসি ফুটাবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা দুর্গত এলাকার জনসাধারণের।

সংবাদটি শেয়ার করুন