উত্তরের কৃষিনির্ভর জনপদ কুড়িগ্রামের উলিপুর। বোরোর পর আমন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কৃষকেরা। তবে, পানির অভাবে কৃষকরা চারা রোপন করতে পারছিলেন না। পানির অভাবে ধানক্ষেত ফেটে চৌচির হতে দেখা যায়। এতে করে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন এ অঞ্চলের চাষিরা। বেশ কিছু কৃষক শ্যালোমেশিন ও গভীর নলকূপের সাহায্যে ক্ষেতে পানি দিলেও কুলাতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় অবশেষে বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির ফলে আমনের ক্ষেতে পানি জমেছে। বিশেষ করে উচু কৃষিজমিতে পানি জমায় কৃষকের মনে স্বস্তি এসেছে। ফলে পুনরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আমন চাষিরা।
উলিপুর সদর ও উপজেলার নাগড়াকুরা, জুম্মাহাট, বজরা, খোঁচাবাড়ি, দুর্গাপুর, থেতরাই, গুনাইগাছ, তাবুকপুর সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় কৃষকেরা আমনের চারা রোপন ও কেউ কেউ ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। দীর্ঘদিন পানির অভাব থাকলেও গত এক সপ্তাহের পানিতে তারা নতুন করে আমনে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। আমন চাষের জমি চারা লাগার জন্য প্রস্তুত করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন ওই সব এলাকার আমন চাষিরা।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়ন হারুনেফড়া এলাকার কৃষক মো: আশরাফ আলী খন্দকার জানান, প্রত্যেক বছরের মত এ বছর তিনি ২ একর (২শ শতক) জমিতে আমন ধান লাগানো শুরু করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পানি না হওয়ায় বিপাকে পরেছিলেন। অবশেষে বেশ কয়েকদিনের টানা বর্ষনের ফলে তার উচু জমিগুলোতেও বৃষ্টির পানি লাগায় তিনি দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন।
উপজেলার পৌর এলাকা যুগি পাড়ার কৃষক মো: আসাদুজ্জামান নবাব জানান, এ বছর আড়াই একর (২৫০ শতক) জমিতে আমন ধান লাগানো শুরু করেছেন। বৃষ্টির পানির অভাবে তার আমনের চারা লাগানোর জমি শুকিয়ে যাওয়ায় তার দুশ্চিন্তার যেন শেষ ছিল না। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তার আমনের চারা লাগানোর উপযোগি হয়েছে। তিনি এখন নিশ্চিন্তে আমনের চারা লাগার কাজ শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, এ বছর উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩০০শ’ হেক্টর। বর্ষার ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের মাধ্যমে বীজ উৎপন্ন ও চারা রোপণের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করছেন এখানকার কৃষকেরা। বৃষ্টির পানি ছাড়া আমন ধান উৎপন্নে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন এখানকার কৃষি বিভাগ। তবে এখন একটু একটু বৃষ্টি হচ্ছে আশা করছেন আমন চাষিদের আমন চাষে সমস্যা হবেনা।
উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমন মৌসুমে বীজতলা তৈরি ও আমন ধান চাষে বৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। তবে এখন একটু একটু বৃষ্টি হচ্ছে। আমন চাষে তেমন সমস্যা হবেনা। তারপরও বেশির ভাগ কৃষক সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে আমন চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রত্যেক বছর আমন মৌসুমে কৃষকদের যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে প্রদান করা হয়। এ বছরও দেওয়া হয়েছে। তবে পানির অভাবে প্রথমের দিকে সামান্য সমস্যা হলেও বেশ কিছুদিনের টানা বর্ষনের ফলে উচু-নিচু আমন ক্ষেতে পানি জমেছে। তাই কৃষকেরা পুনরায় আমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে এবং কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যর্য্য মুল্য পাবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
