ঢাকা | শনিবার
২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউরোপের পর পুড়ছে আমেরিকা

ইউরোপের পর পুড়ছে আমেরিকা

দাবানল দানবে শঙ্কিত পশ্চিমাবিশ্ব

সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ভয়াবহ তাপদাহের সঙ্গে শুরু হওয়া দাবানল পুড়িয়ে দিয়েছে গোটা মানচিত্রের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত। শত শত হেক্টর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নিয়ন্ত্রণ দাবানলের কারণে। তাছাড়া এবারই প্রথম অসহনীয় মাত্রার তাপমাত্রা সহ্য করতে হয়েছে ইউরোপকে। এতে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। তাছাড়া তাপদাহ থেকে সৃষ্ট দাবানলেও বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

তবে ইউরোপে দাবানলের তাণ্ডব শেষ হওয়ার আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়েছে। বড় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে ক্যালিফোর্নিয়ায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে বহু এলাকাব্যাপী। এখন পর্যন্ত ১০টি বসতবাড়ি পুড়ে গেছে। তিন হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ইয়োসেমিটি ন্যাশনাল পার্কের কাছে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল। পরিস্থিতি সামাল দিতে অঙ্গরাজ্যটিতে আংশিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। দাবানল বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। তাতে বলা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া দাবানলে এখন পর্যন্ত ১০টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিন হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার ফায়ার সার্ভিস বিভাগ।

ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার প্রোটেকশন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে এ সময়ে যতগুলো দাবানল হচ্ছে তার মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলটি সবচেয়ে বড়। ১১ হাজার ৯০০ একর জায়গাজুড়ে এ দাবানল চলছে। মারিপোসা কাউন্টিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গাভিন নিউসোম বলেন, ‘ শুষ্ক আবহাওয়া ও খরার কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে।’ ওয়াশিংটন ও ফিলাডেলফিয়াতেও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার মারিপোসাতে তাপমাত্রা ছিল ৯৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েক দিন সেখানকার তাপমাত্রা এমনই থাকবে বলে আভাস দেয়া হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় গত বছরেও ছড়িয়ে পড়েছিল দাবানল। চলতি বছরেও ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি জুলাইয়ের প্রথম সপ্তায় দাবানলের হুমকিতে পড়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রজাতির গাছগুলোর একটি জায়ান্ট সিকোইয়াসের প্রায় ৫০০ গাছ। গত বছরের দাবানলেও কয়েক হাজার সিকোইয়াস গাছ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল।

বিবিসির প্রতিবেদন মতে, গত ৭ জুলাই শুরু হওয়া এই দাবানলে হুমকিতে পড়া সিকোইয়াস গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত গ্রিজলি জায়ান্টও। প্রায় ৩ হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকা এই গাছটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গাছ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনে দাবদাহ অনেক বেশি নিয়মিত, তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। শিল্প যুগ শুরুর পর থেকে পৃথিবী ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে না আনলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। ফ্রান্সের আবহাওয়া দপ্তর রেকর্ড তাপমাত্রার আভাস দিয়েছে। পর্তুগালে তাপমাত্রা সম্প্রতি বেড়ে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়।

যুক্তরাজ্যে চরম গরমের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। দেশটির কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ইউনিস লো বিবিসিকে বলেন, বর্ধিষ্ণু তাপমাত্রা জলবায়ু পরিবর্তনের স্মারক। যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর অতিরিক্ত দুই হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দাবদাহকে দায়ী করা যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন