- ভিসা অব্যাহতি চুক্তি স্বাক্ষর
দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ দেশ ব্রাজিলে ৪-দিনব্যাপী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম সরকারি সফরকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টের বাহকদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। ব্রাজিল সরকারের পক্ষে এই চুক্তিতে সাক্ষর করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস আল্বের্তো ফ্রাঙ্কো ফ্রান্সা।
প্রতিমন্ত্রী গত ১৮ জুলাই ব্রাসিলিয়াস্থ কূটনৈতিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র রিও ব্রাঙ্কো ইনস্টিটিউটে একটি বক্তৃতা করেন। কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থী ছাড়াও ব্রাজিল সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের সদস্য, সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক গবেষণাকেন্দ্রের সদস্যসহ শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন।
শাহরিয়ার আলম দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তর অর্থনৈতিক সাফল্যে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের ভূমিকা বিশ্লেষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতীক অভুতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়ন বর্ণনা করেন। রিও ব্রাঙ্কো ইনস্টিটিউটের নবীন প্রশিক্ষণার্থীদের সরকারের স্থিতিশীলতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কীভাবে ভূমিকা রেখেছে তা ব্যাখ্যা করেন। প্রতিমন্ত্রীর বক্তৃতা নবীন প্রশিক্ষনার্থীদের মধ্যে যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় তা প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রতীয়মান হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং রিও ব্র্যাঙ্কো ইনস্টিটিউট (ব্রাজিল ফরেন সার্ভিস একাডেমি) এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা এবং রাষ্ট্রদূত গ্লিভানিয়া মারিয়া অলিভেইরা, পরিচালক- রিও ব্র্যাঙ্কো- এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাউলিনো ফ্রাঙ্কো ডি কারভালহো নেতো, পররাষ্ট্র বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত ভাইস-মিনিস্টার, প্রতিমন্ত্রীর সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত নেতো বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথ নিয়ে আলোচনা করেন এবং উভয়ই নতুন করে এটিকে আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
তারা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, কৃষি-ব্যবসা, খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও ক্রীড়ার ক্ষেত্রে দ্রুততর সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন। উভয় পক্ষই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালাতে সম্মত হয়েছে, যা বর্তমানে সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। তারা সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুসহ পারস্পরিক বহুপাক্ষিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত পাউলিনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা করেন।
শাহরিয়ার আলম পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস আল্বের্তো ফ্রাঙ্কো ফ্রান্সার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং এরপর ভিসা অব্যাহতির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। মন্ত্রী কার্লোস ফ্রান্সা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় প্রতিমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। কৃষি সহযোগিতা, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, জ্বালানি সহযোগিতা ছিল তাদের আলোচনার মূল ক্ষেত্র।
অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সমাপ্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী মারকোসুরের পিটিএ এবং এফটিএতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস ফ্রান্সার জোর সমর্থন কামনা করেন। ব্রাজিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি হওয়ায় প্রতিমন্ত্রী ইউক্রেন সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তার তাগিদ দেন। এফবিসিসিয়াই’র সভাপতি জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি ব্যবসায়িক দল এবং বাংলাদেশ-ব্রাজিল চেম্বারের প্রতিনিধিবৃন্দ প্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।