ঢাকা | সোমবার
১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইএমএফের ঋণে দ্বিধা

আইএমএফের ঋণে দ্বিধা
  • কোনো প্রস্তাব আসেনি, এলেও ভাবতে হবে: অর্থমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে অর্থ নেয়ার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে কোনো প্রস্তাব আসেনি। আর এলেও তা নেব কিনা তা ভাবতে হবে। কেননা দেশের জনগণের স্বার্থের বাইরে আমরা চিন্তা করি না। এমনটাই জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৬তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ২১তম সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার মূল্যস্ফীতির হিসাবটি মাস ভিত্তিক তবে এটি বছর ভিত্তিক হতে হবে। কেননা ২০০৯ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৩ শতাংশ। সেখান থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ৫.৯ শতাংশ। সেক্ষেত্রে সবাইকে মৃতব্যয়ী হতে হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস হালনাগাদ প্রকাশিত প্রতিবেদনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হার ৭.৫৬ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়, যা গত ৯ বছর মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সেখানে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে হচ্ছে গত বছরের একই মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই মাসের পার্থক্য উঠে আসে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের অর্থনীতি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আছে কি না প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে খোঁজখবর রাখছি। আমাদের অর্থনীতি যতটা খারাপ অবস্থা বলে বলা হচ্ছে আসলে তা নয়। অনেক দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনীতি এখনও অনেক ভালো অবস্থানে। ২০০৯ সালে যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন রিজার্ভ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। সেই রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারে গেছে। কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থনৈতিক কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ১০টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে সবগুলোই পাস হয়েছে। ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৪টি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ২টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১টি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১টি। ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদিত ৮টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৪০ কোটি ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৩২ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার-জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৭৪৮ কোটি ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৪২২ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ও বৈদেশিক অর্থায়ন ২৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৩ হাজার ৮১০ টাকা।

অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রস্তাবনাটি ছিল বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন ডেসকো লিঃ কর্তৃক পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণের লক্ষ্যে “রাজউক পূর্বাচল নতুন শহরের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিক আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্কে রূপান্তর” প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন। এটি নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদিত ১০টি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-

১. শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন  (বিসিআইসি) ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়ান্টস কোম্পানি সৌদি আরব থেকে ২য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১৬৭ কোটি ৫৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকায় আমদানি করবে।

২. খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তরের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য এম/এস এগ্রিকোর্প ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন (+৫%) গম ২০৯ কোটি ৫০ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকায় আমদানি। ৩. স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন চট্টগ্রাম ওয়াসার “ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ” প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে  জয়েন ভেঞ্চার অব (১) ডং মিইউং ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সালটেশনস এন্ড আর্কিটেকচার কো. লি. কোরিয়া; (২) শিনউ; (৩) এইচডিইসি; (৪) ভিসজ্রো সিএনসি; (৫) ডং-এ; এবং (৬) এসিই এন্ড স্ট্রাটেজি, বাংলাদেশকে ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৬ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব।

৪. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের “ ফ্লাড এন্ড রিভারব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (প্রজেক্টস-২) প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জয়েন ভেঞ্চার অব (১) নর্থইস্ট হাইড্রোলিক কনসালটেন্স লি. কানাডা এবং (২) ইউরো কনসাল্ট মোট ম্যাকডোনাল্ড, ন্যাদারল্যান্ডকে ১২৭ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ৪১৪ টাকায় নিয়োগ।

৫ ও ৬ নং প্রস্তাব দুটি বাতিল করা হয়েছে। তারমধ্যে ৫ নং প্রস্তাবটি হচ্ছে

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের “যশোর বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও শাহ মখদুম বিমানবন্দর, রাজশাহী-এর রানওয়ে সারফেসে অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলেকরণ” প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাব বাতিলপূর্বক ক্রয় কার্য পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের জন্য অনুমোদন। ৬. একই মন্ত্রণালয়ের “কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (২য় পর্যায়)” প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাব বাতিলপূর্বক ক্রয় কার্য পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রস্তাব রয়েছে। তার মধ্যে ৭ নং প্রস্তাবে বলা হয়, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মোংলা বন্দরের জন্য লামোর করপোরেশন পিএলসি, ফিনল্যান্ডের নিকট থেকে ৯৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৪৭ টাকায় বর্জ্য সংগ্রহকারী একটি আধুনিক জলযান মারপোল ওয়াস্ট কালেকশন ভ্যাসেল ক্রয়।

৮. “মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা” প্রকল্পের আওতায় ডিজাইন, সাপ্লাই এন্ড ইন্সটেলেশন অব পোর্ট রিসিপশন পেসিলিটি সংক্রান্ত সেবা লামোর করপোরেশন পিএলসি, ফিনল্যান্ডের নিকট থেকে ১১১ কোটি ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮২১ টাকায় ক্রয়।

৯. “মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা” প্রকল্পের আওতায় অয়েল স্কিমার, বুম ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ ২টি অয়েল রিকভারি ভেসেল লামোর করপোরেশন পিএলসি, ফিনল্যান্ডের নিকট থেকে ৮১ কোটি ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩২৮ টাকায় ক্রয়।

১০. বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক খুচরা যন্ত্রাংশসহ ১টি ট্রেইলিং সাকশন হোপার ড্রেজার দরদাতা প্রতিষ্ঠান শিপসওয়ার্ফ গেব্রোডার্স কোইম্যান বি.ভি লিনডটসেডিক, ন্যারদারল্যান্ডের নিকট থেকে ২৩৫ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৬ টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

আইএমএফ বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, সেটি নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, তারা বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে থাকে। এটি বেশিরভাগ সময় উপকারে আসে। তাদের ভালো দিকগুলো আমরা নিয়ে থাকি। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন তেমন কোনো ঝুঁকিতে নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন