ঢাকা | রবিবার
২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিপোতে আরো দুর্ঘটনার শঙ্কা

ডিপোতে আরো দুর্ঘটনার শঙ্কা
  • দেশে বাড়ছে রাসায়নিক কারখানা, নেই মনিটরিং

গত ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর ফলে রাসায়নিক ও বিপদজনক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শিল্প নিরাপত্তার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। দেশের উদীয়মান এ শিল্পের বিকাশ বিভিন্নভাবে দেশে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতের বর্তমান অবস্থা ও নিরাপত্তায় করণীয় ওঠে আসে এক গবেষণা প্রতিবেদনে। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এ ধরণের কিংবা এর চেয়ে বড় ধরণের আরো দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। তাছাড়া নিয়মিত নজরদারি, লাইসেন্স নবায়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাবও দেয়া হয়।

গতকাল বুধবার ‘রাসায়নিক ও বিপদজনক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শিল্প নিরাপত্তা : চট্টগ্রামের ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা’শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনে আমদানি-রপ্তানির কনটেইনার শিল্পের বিভিন্ন অসংগতি ওঠে আসে।  সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে থেকে হাইড্রেজেন পার অক্সাইড রপ্তানি করার সময় দূর্ঘটনাটি ঘটেছিল। তবে দেশে অনেক বেশি পরিমাণ দাহ্য রাসায়নিক বিদেশ থেকে আমদানিও করা হয়। সেখানেও এ ধরণের ঝুঁকি রয়ে গেছে। তাছাড়া দেশে ভবিষ্যতে বিপদজনক নানা ধরণের ক্যামিকেলের ব্যবহার বাড়বে। শিল্প হাব হিসেবে পরিণত হতে যাচ্ছে দেশ। সেক্ষেত্রে ৪ ধরণের বিপদজনক রাসায়নিক দ্রব্য দেশ থেকে রপ্তানিও করা হচ্ছে। দেশের ৪টি প্রতিষ্ঠান বছরে ১৯০ মেট্রিকটন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রপ্তানি করে থাকে। এসব কারখানা আরো স্থাপিত হতে যাচ্ছে। ফলে আন্তার্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করে নিরপাত্তা নিশ্চিত করা না গেলে হুমকিতে পড়বে পুরো শিল্প নিরাপত্তা।

প্রতিবেদনে বলা হয় দেশে ১৯৯৬ সাল থেকে বন্দরে পণ্য ওঠা-নামা করাতে  ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) সেবা চালু করা হয়। দেশে এখন এমন ডিপোর সংখ্যা ২০টি। যেসব ডিপো দিয়ে ৩৮ ধরণের পণ্য ওঠনামা করার অনুমোদন রয়েছে। যার মধ্যে ১৫ ধরণের বিপদজনক পদার্থ লোড-আনলোড করা হয়। আমদানি করা দাহ্য পদার্থের ১৯ শতাংশ আসে এসব ডিপো দিয়ে। আর ৮১ শতাংশ খালাস হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আর রপ্তানি করা রাসায়নিকের ৫১ শতাংশই হয় বন্দর কর্তপক্ষের মাধ্যমে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষেরও পর্যাপ্ত নিরাপ্ত প্রস্তুতি নেই বলে জানায় সিপিডি।

এদিকে, রাসায়নিক দ্রব্য রপ্তানি করতে ও কারখানা পরিচালনার জন্য আলাদাভাবে এনবিআর, বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিডা, নেভি, পরিবেশ অধিদপ্তার, ফায়ার সার্ভিস ও ডিসি অফিসের অনুমোদন নিতে হলেও কেন্দ্রিয় কোন কাঠামো না থাকায় ফাকফোকর দিয়ে যথাযথ লাইসেন্স নবায়ন না করেই এসবের কাজ চলে। কারখানা পর্যায়ে মনিটিরং ব্যবস্থা না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যায়। দেশে এমন রাসায়নিকের ২৭টি বড় কারখানা রয়েছে। ১৭৩টি ছোট কারখানা রয়েছে। তাছাড়া ১৪৯টি ওষুধ ক্যামিকেল কারখানা রয়েছে। এসব কেমিক্যাল কারখানায় প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা কার্যক্রম তদারকির জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করে সিপিডি।

কনটেইনার ডিপোতে বিপদজনক পদার্থ হেন্ডেলিং করার নতুন নীতিমালায় অনুযায়ী নতুন  ডিপো করতে হলে বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে তা স্থাপনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। তবে দেশের ২০টির মধ্যে ১৮টি ডিপোই বন্দরের আশেপাশে লোকালয়ের নিকটে অবস্থিত। ফলে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে তা আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে। তাই নিদিষ্ট দূরত্বে নীতিমালায় পরিপালন করা হলে এসব ডিপোকে রাসায়নিক পদার্থ লোড-আনলোড করার অনুমতি অব্যাহত সমিচিন হবে কিনা সে বিসয়টিও ভেবে দেখতে বলছে সিপিডি।

নতুন নীতিমালায় ডিপোতে ৩৮ পণ্যের জাগায় ১০০ পণ্য লোড-আনলোড করার অনুমোদন দেয়ার কথা হয়েছে। ফলে নতুন করে আরো বিপদজনক পণ্যের লোড-আনলোডের কার্যক্রম বাড়বে ডিপোগুলোতে। তাই সমন্বিত কাঠামোর মাধ্যমে উৎপাদন থেকে পরিবহন ও আমদানি/রপ্তানি পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের তাগাদা দেয়া হয়। বিদ্যমান আইন আপডেট ও শক্তিশালী করণের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করছে সিপিডি। বিএম ডিপোতে দাহ্য পদার্থ নিয়ে কাজ করার অনুমোদন ছিল না বলেও জানায় সিপিডি। যথাযথ তথ্য না থাকায় সেখানে হতাহতের ঘটনা বেশি ছিল। সেখানে ১১০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির কথা বলা হচ্ছে।

এদিকে সূচনা বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনে  বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের চাহিদার কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে শিল্পায়নের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশও ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের অঞ্চল গড়ে তুলেছে। এগুলো শিল্পায়নের বড় ভূমিকা রাখবে। সে জন্য ক্রমান্বয়ে যখন আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে যারা শিল্পের শ্রমিক রয়েছে তাদের জীবনের নিরাপত্তা একদিকে আর একদিকে জীবনের গুণমান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন