ঢাকা | শুক্রবার
৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামের এলএ শাখায় আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতি, আটক ১

চট্টগ্রামের এলএ শাখায় আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতি, আটক ১

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতির অভিযোগে শাহ আলম (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে জেলা প্রশাসন।

গত রবিবার বিকেলে তাকে আটকের পর কোতোয়ালী থানা পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল। আটক হওয়া শাহ আলম ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরসোনাপুর এলাকার রহিমুল্লাহ’র ছেলে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা সূত্রে জানা যায়, মিরসরাই অর্থনৈতিক জোনের এলএ মামলা নং- ১৩/১৭-১৮, বিএস খতিয়ান-৩৬৭, বিএস দাগ নং-১০৮৭ম, দক্ষিণ মঘাদিয়ার অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে জাল আমমোক্তারনামা তৈরি করে ক্ষতিপূরণের অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিল একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

চক্রের সদস্য শাহ আলম মিরসরাই অর্থনৈতিক জোনের অধিগ্রহণকৃত সাড়ে ৩ একর জমির বিপরীতে দুই কোটি ঊনপঞ্চাশ লাখ সতের হাজার ছয়শ দুই টাকা পঞ্চাশ পয়সা তোলার জন্য ভূমি মালিকের কাছে থেকে পাওয়ার অব এটর্নি (আমমোক্তারনামা) নিয়েছেন দাবি করে এলএ শাখায় একটি আবেদন জমা দেন।

ভূমিটির প্রকৃত মালিক মৃত খায়রুল বশর। মৃত্যুর পর খায়রুল বশরের স্ত্রী মোছাম্মৎ আর জাহান ও দুই ছেলে জাফর উল্লাহ ও সাইফুল ইসলাম এবং এক মেয়ে হাসনা আক্তার জমিটির মূল ওয়ারিশ। এদিকে শাহ আলম ওই ভূমির মালিক খায়রুল বশরের ওয়ারিশ মোছাম্মৎ আর জাহান রীনা, সাইফুল ইসলাম ও শামসুর নাহারের কাছ থেকে রেজিস্টার্ড আমমোক্তারনামা নিয়েছেন দাবি করে ওই সাড়ে ৩ একর জমির ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করার জন্য আবেদন করেন।

তবে একই জমির ক্ষতিপূরণ দাবিতে একাধিক আবেদন পাওয়ায় এলএ শাখার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারদের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। পরে শাহ আলমের আমমোক্তারনামাটির সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই করার পর তারা জানতে পারেন সেটি জাল।

বিষয়টি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামালকে জানান ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তারা। শুরু হয় খোঁজখবর। মূল ওয়ারিশদের পক্ষে সাইফুল ইসলাম অভিযুক্ত শাহ আলমকে আমমোক্তার নিযুক্ত করেননি এবং শাহ আলমের আমমোক্তারনামা দলিলটি জাল বলে দাবি করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জমির অন্যান্য ওয়ারিশদের সঙ্গেও কথা বলেন। তাদের বক্তব্যেও শাহ আলমের জাল দলিলের বিষয়টি উঠে আসে।

এরপর এলএ শাখার সার্ভেয়ার আব্দুল মোমেন, অফিস সহকারী মোহাম্মদ শোয়েব ও এলএও এহসান মুরাদ জালিয়াত চক্রের সদস্য শাহ আলমকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল জানান, এরআগে অপর একটি প্রতারক চক্রকে জাল পাওয়ার অব এটর্নি ব্যবহার করে ভূমি অধিগ্রহণের দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকার চেকসহ আটক করা হয়েছিল। এরপর থেকে পাওয়ার অব এটর্নি নিয়ে কেউ আবেদন করলে তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেওয়া আছে।

তিনি আরও বলেন, আটক শাহ আলম জানিয়েছিলেন জমির মূল মালিক আমেরিকায় বসবাস করেন। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে কৌশলে দুই ঘণ্টা সময় নেওয়া হয় শাহ আলমের কাছ থেকে। এই সময়ের মধ্যে ভূমি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তারা কাউকে পাওয়ার অব এটর্নি দেননি।

মাসুদ কামাল আরও জানান, আটক শাহ আলম জিজ্ঞাসাবাদে জাল আমমোক্তারনামার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি এই দালাল চক্রের আরও দুই জনের নামও বলেছেন। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন