বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলাদেশ ১৩ খাতে শীর্ষে--

শীর্ষের সবজিতে অস্বস্তি

  • শাক-সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় বাংলাদেশ
  • আম উৎপাদনে অষ্টম ও আলুতে ষষ্ঠ

রাজধানী ঢাকার কাঁঠাল বাগানে এক কেজি করলা কিনতে ৬০ টাকা ব্যয় করতে হয়। পটলে ৮০, কচুর লতিতে ৬০, বেগুনে ৭০ ও আলুতে ৩৫ টাকা গুনতে হয়। বাজারের এই চড়া দামে নাভিশ্বাস উঠছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি তাদের কাছে ম্লান হয়ে যায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে। এরই মাঝে নতুন একটি সংবাদ দেশের জন্য আনন্দ বয়ে আনছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন বাংলাদেশ শাক-সবজি উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের কাতারে চলে এসেছে।

সাব্বির আহমেদ গত ২৩ জুন একটি মাঝারি ধরনের লাউ কিনেছেন ৬০ টাকায়। তার পাঁচজনের সংসারে তা মাত্র এক বেলা খাবার হয়েছে। ৪০ টাকায় কিনেছেন এক কেজি পেঁপে। তিনি বলেন, এক কেজি শসা কিনতে দিতে হয় ৬০ টাকা। জাকির হোসেন নামের অপরজন বলেন, এক কেজি ঢেড়স কিনতে দিতে হয় ৫০ টাকা। এমন উর্ধ্বগতির বাজার দৌড়ের ঘোড়ার চেয়েও এগিয়ে। কৃষিমন্ত্রীর এমন ঘোষণায় তাদের মনে শান্তি ও স্বস্তি নেই। কেননা উৎপাদনে শীর্ষ দশে থাকলেও দামে কোনোভাবেই কম নয় বাংলাদেশ। তবে এসব শাক-সবজির দাম বেশির ভাগই যায় মধ্যসত্ত্বভোগীদের পকেটে। কৃষকের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন নেই।

নেদারল্যান্ডসের হ্যাগে অনুষ্ঠিত ৬ মাসব্যাপী ‘ফ্লোরিয়াডে এক্সপো ২০২২’ তে যোগদান করতে গিয়ে গত শুক্রবার বাংলাদেশ ভবনে গবেষণা বিষয়ক ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. সুকে হিমোভারার সঙ্গে বাংলাদেশের কৃষি রূপান্তর বিষয়ে আলোচনাকালে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত এক দশকে কৃষি ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা ও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে এবং বিভিন্ন শস্য ও শাক-সবজি উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  কুসিক নির্বাচনে বিপর্যয় দেখিনি: সিইসি

গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়াগেনিংগেন বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ কৃষি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃষিপণ্যের জাত উন্নয়ন ও উন্নততর কৃষি-প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে নিয়মিতভাবে প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। বৈঠকে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ বাংলাদেশের কৃষি গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণামূলক প্রকল্প চালুর বিষয়টি উত্থাপন করলে ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।

কৃষিমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যানের কৃষি ক্ষেত্রকে বৃহত্তর অবস্থানে তুলে ধরার বিষয়ে আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। কৃষিমন্ত্রী ড. সুকেকে ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানান।

কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন শস্য ও পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, শস্য বহুমুখীকরণ, কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ ও আধুনিক উপায়ে বাজারজাতকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিযোজন সংক্রান্ত প্রায়োগিক গবেষণার বিষয়ে আলোচনা করেন।

গত ২০২১ সালের ২৭ মার্চ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ১৩টি খাতে বিশ্বের শীর্ষ দশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান জানা যায়।

সবজিতে তৃতীয়
সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বছরে উৎপাদনের পরিমাণ ১ কোটি ৬০ লাখ টন। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থান চীনের, দ্বিতীয় স্থান ভারতের। দেশে বর্তমানে ৬০ ধরনের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে, যার সঙ্গে জড়িত ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার।

আরও পড়ুনঃ  আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ

আলুতে ষষ্ঠ
আলু উৎপাদনে বিশ্বে ষষ্ঠ। স্বাধীনতার এক বছর আগে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ টন। ৫০ বছরে আলু উৎপাদন ১১ গুণ বেড়েছে। এফএওর হিসাব অনুযায়ী, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ টন। ৯ কোটি ১৪ লাখ টন নিয়ে বিশ্বে প্রথম এখন চীন, আর ৪ কোটি ৯৭ লাখ টন নিয়ে দ্বিতীয় হচ্ছে ভারত।

কাঁঠালে দ্বিতীয়
বিশ্বে বছরে ৩৭ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। এ ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে। বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ১০ লাখ টন। বিশ্বে সর্বোচ্চ ১৮ লাখ টন কাঁঠাল হয় ভারতে। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড।

ধান উৎপাদনে চতুর্থ
দেশে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ কোটি ২৬ লাখ টন ধান উৎপন্ন হয়েছে, যা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। চীন ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টন উৎপাদন করে প্রথম, ১১ কোটি ৬৪ লাখ টন উৎপাদন করে দ্বিতীয় স্থানে ভারত।

ইলিশে প্রথম
বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই এদেশে উৎপাদিত হয়। যার পরিমাণ ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। চার বছর আগেও বিশ্বে মোট ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশের অংশ ছিল ৬৫ শতাংশ। ইলিশে ভারত দ্বিতীয়, মিয়ানমার তৃতীয়। এ ছাড়া ইরান, ইরাক, কুয়েত, পাকিস্তানেও সামান্য ইলিশ উৎপাদন হয়।

তৈরি পোশাকে দ্বিতীয়
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পোশাক রপ্তানিতে প্রথম হচ্ছে চীন।

আরও পড়ুনঃ  পাকা রাস্তার দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন

আমে অষ্টম
বাংলাদেশ বিশ্বে আম উৎপাদনে অষ্টম। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানেও উঠেছিল। আম উৎপাদনে সবার ওপরে ভারত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন।

পেয়ারায় অষ্টম
১০ লাখ ৪৭ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন করে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম স্থানে। ১ কোটি ৭৬ লাখ টন নিয়ে ভারত প্রথম এবং ৪৪ লাখ টন উৎপাদন করে চীন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

পাট রপ্তানিতে প্রথম, উৎপাদনে দ্বিতীয়
একসময়ের ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। উৎপাদনের পরিমাণ ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টন, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৪২ শতাংশ। প্রায় ২০ লাখ টন উৎপাদন করে প্রথম ভারত। ভারতে হয় বিশ্বের ৫৫ শতাংশ উৎপাদন। ৪৫ হাজার টন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে চীন।

ছাগলের দুধে দ্বিতীয়
বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দুই দেশ হচ্ছে ভারত ও চীন।

মিঠাপানির মাছে তৃতীয়
মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। নদ-নদীর খারাপ অবস্থা সত্ত্বেও এফএওর মতে, দেশে মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয় বিশ্বের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ। ১৬ শতাংশ নিয়ে প্রথম চীন, ১৪ শতাংশ নিয়ে ভারত দ্বিতীয়।

প্রবাসী আয়ে অষ্টম
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন, যাঁদের বেশির ভাগই শ্রমিক। নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ তাঁরা দেশে পাঠান। প্রবাসী আয় আহরণে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এ ছাড়াও পেঁপে উৎপাদনে ১৪তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন