আমের রাজধানী খ্যাত নওগাঁর সাপাহার হতে দেশের বাইরে আম রফতানি হচ্ছে। প্রথম ধাপে উপজেলার বরেন্দ্র এগ্রোপার্ক থেকে ১ মেট্রিক টন আম যাচ্ছে ইংল্যান্ডে।
ইংল্যান্ডে রপ্তানির উদ্দেশে গত সোমবার সন্ধ্যায় সাপাহার উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ থেকে ১ মেট্রিক টন বারি-৩ অর্থাৎ ‘আম্রপালি’ আম নারায়নগঞ্জের শ্যামপুরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আমের চালান বিমান যোগে ইংল্যান্ডে যাবে।
সাপাহার উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’- এর মালিক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা প্রথম চালানে ১ টন ‘আম্রপালি’ আম ইংল্যান্ড পাঠান। বাংলাদেশ ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে তিনি ইংল্যান্ড আম রপ্তানি করেন।
সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাপলা খাতুন বলেন, ‘বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম চাষের জন্য উপজেলার ১৫ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৌসুমজুড়েই এই চাষিদের বাগানে আম উৎপাদনের প্রক্রিয়া আমরা দেখভাল করেছি। এই চাষিদের উৎপাদিত ও ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত আম বিদেশে পাঠানোর জন্য উপযুক্ত।’
তিনি আরও বলেন, যে আম দেশের বাজারে চার হাজার টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে, সেই আম রপ্তানিকারকদের কাছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন চাষিরা।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাষিদের মধ্যে সাপাহার উপজেলার গোডাউন পাড়ার শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানার ১০৭ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা বাগানে দেড় হাজার আম্রপালি জাতের গাছ আছে। তাঁর বাগানে দেশি বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ ছাড়াও বিদেশি মিয়াজাকি, থাই ব্যানানা ম্যাঙ্গো, রেড পালমার, টেনসিংটন প্রাইড, অস্টিন, গিলানি ও রুবি জাতের আমগাছ আছে।
তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, বিদেশে রপ্তানির জন্য তাঁর বাগানে এ বছর আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কাটিমন, বারি আম-৪ ও মিয়াজাকি জাতের গাছের আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন। কারণ, রোগবালাইমুক্ত আমই বিদেশে যায়। এরপরও যেসব আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে, সেগুলো ঢাকাতে পরীক্ষা করা হয়। ওই পরীক্ষার মাধ্যমে আমে কোনো রোগবালাই বা কীটনাশক আছে কি না, তা নিশ্চিত করা হয়। এরপর তা বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
তিনি আরোও জানান, ইংল্যান্ড ছাড়াও ফিনল্যান্ড, ইতালি, সুইডেনে, জার্মানি, কাতার, ওমান, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, সৌদিসহ ১০ টি দেশে আম পাঠানোর অর্ডার তিনি পেয়েছেন।
এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, ‘সাপাহারের আম যাচ্ছে বিদেশে। এটা খুবই খুশির খবর। সোহেল রানার মাধ্যমে বিদেশে এ অঞ্চল থেকে আম পাঠানো শুরু হলো। আশা করি, তাঁর দেখাদেখি ভবিষ্যতে অন্য চাষিরাও বিদেশে আম পাঠাতে উৎসাহী হবেন। বিদেশে আম রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনে আমরাও ভূমিকা রাখতে পারব।’ আম রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু বাধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে রপ্তানি উপযোগী প্যাকেজিং হাউস না থাকা একটি বড় সমস্যা। এ ছাড়া বর্তমানে একমাত্র নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরে আমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং আমে রোগবালাই থাকলে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট করানো হয়। এসব সুবিধা স্থানীয় পর্যায়ে নিশ্চিত করা হলে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে চাষিদের আরও সুবিধা হতো।’
আনন্দবাজার/শহক